অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, রাজ্যগুলিকে পরিকাঠামোয় খরচের জন্য আরও এক বছর ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু তার জন্য রাজ্যের উপরে একগুচ্ছ শর্ত চাপানোরকারণ কী?
উত্তর: যে কোনও প্রকল্পে অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা অর্জনের মূল শর্ত দু’টি। এক, কেন্দ্রীয় সরকার সেই প্রকল্পের যে নাম দেবে, তা কোনও ভাবেই বদলানো যাবে না। তা হলে টাকা আটকে যাবে। দুই, কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা পাওয়ার জন্য ওই প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। রাজ্যের অর্থও সেই অ্যাকাউন্টে যাবে। এর ফলে সেই অ্যাকাউন্টে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই পক্ষই নজরদারি করতে পারবে। কোনও ভাবেই সেই অর্থ রাজ্যের নিজস্ব ঘাটতি মেটাতে বা অন্য প্রয়োজনে খরচ করা যাবে না। এখন কেন্দ্রের থেকে টাকা পেয়েও অনেক রাজ্য ছয় মাস খরচ না করে ফেলে রাখে।
প্রশ্ন: পরিকাঠামোয় রাজ্যকে ঋণের ক্ষেত্রে যে সব শর্ত চাপানো হয়েছে, তাতে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি মেনে কাজ করতে হবে। রাজ্যকে ৩.৫% রাজকোষ ঘাটতি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানেও ০.৫%-য় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের শর্ত রাখা হচ্ছে কেন?
উত্তর: ঋণের সিংহভাগ অর্থই বিনা শর্তে দেওয়া হবে। সামান্য অংশের ক্ষেত্রে শর্ত থাকবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের শর্তটা অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে।
প্রশ্ন: রাজ্যগুলি যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী কাজ করে, তার জন্য নীতি আয়োগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে কি রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের নীতি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে না?
উত্তর: কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, কিছু বিষয়ে অবশ্যই স্থানীয় এলাকার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ হওয়া দরকার। কিন্তু ন্যূনতম কিছু বিষয়ে জাতীয় স্তরে কেন্দ্র, রাজ্য সকলেরই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন: অর্থনীতিতে গতি আনতে বাজেটে সরকারি খরচে জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জিডিপি-র তুলনায় বাজেটের মোট খরচের হার কমছে। ইউপিএ জমানায় বাজেটের মোট সরকারি খরচ ছিল জিডিপি-র ১৫%। মোদী জমানায় তা কমে যায়। কোভিডের সময়ে বাড়লেও এখন তা কমে ফের ১৫%। সরকারি খরচ কমিয়ে কী ভাবে আর্থিক বৃদ্ধি হবে?
উত্তর: আর্থিক বৃদ্ধি মোট সরকারি খরচের উপরে নির্ভর করে না। কোথায় খরচ হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে। সরকারি খরচে যখন ভবিষ্যতের জন্য উৎপাদনশীল সম্পদ তৈরি হচ্ছে, সড়ক, রেল, বন্দরের প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, তখন তা থেকে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে।
(সাক্ষাৎকারটির আগের অংশটি পড়তে ক্লিক করুন নীচের লিঙ্কে)
প্রশ্ন: কিন্তু বাজারে চাহিদা বা কেনাকাটা বাড়ছে না। তার কী ভাবে সমাধান হবে?
উত্তর: পরিকাঠামোয় খরচ হলেও বাজারে চাহিদা তৈরি হবে। কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তা থেকেও বাজারে চাহিদা তৈরি হবে।
প্রশ্ন: তাতে তো দেরি হবে! বেশ কিছুটা সময় লাগবে!
উত্তর: সেটা ঠিকই। এর বেশি কিছু সরকারের করার নেই। সরকার কতটা বাজারে চাহিদা তৈরি করতে পারে, তার সীমারেখা রয়েছে। তা ছাড়া, প্রধান সমস্যা বাজারে চাহিদা নয়। শিল্পে লগ্নি নিয়ে আসা। তাতে কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে, বাজারে চাহিদা বাড়বে। অল্প সময়ের জন্য বাজারে চাহিদা তৈরি করতে মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন: বাজেটে তো একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে সামাজিক ক্ষেত্রে খরচ কমানো হয়েছে। এর কারণ কী?
উত্তর: সমাজকল্যাণ, নারী-শিশু কল্যাণ, গ্রামোন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—কোনও খাতেই সামগ্রিক ভাবে বরাদ্দ কমেনি। কিছু নির্দিষ্ট প্রকল্পে বরাদ্দ কমতে পারে। একশো দিনের কাজে সিদ্ধান্তগত ভাবেই বরাদ্দ কমানো হয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, জল জীবন মিশনে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সেটাও গ্রামে খরচ হবে। সেখানেও কাজের সুযোগ তৈরি হবে। ফলে একশো দিনের কাজের চাহিদা কমবে। তবে প্রয়োজন পড়লে আরও অর্থ বরাদ্দ হবে।
প্রশ্ন: আগামী অর্থ বছরেও রাজকোষের ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপুল অর্থ ঋণ নিতে হচ্ছে। ঋণের বাজারে, বেসরকারি শিল্পের জন্য ঋণে তার কতটা প্রভাব পড়বে?
উত্তর: গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণের পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে জিডিপি-র বহর বেড়েছে ১৫ শতাংশ। ফলে আমরা ঋণের বাজারে খুব বেশি বোঝা চাপাচ্ছি না। এর ধাক্কায় শিল্পের জন্য ঋণে সুদের খরচ বাড়বে না।
(শেষ)