প্রতীকী ছবি।
করোনা আবহে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার অগণিত পড়ুয়ার কাছে অধরাই থেকে গিয়েছে স্কুলের পড়াশোনা। কারণ, প্রায় ৬০ শতাংশ পড়ুয়ার ঘরেই ইন্টারনেটের সুবিধা নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগে বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ডিজিটাল বিভাজন। আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমনই দাবি করা হয়েছে।
গত বছরের গোড়ায় দেশে কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকেই একে একে বন্ধ হয়েছে স্কুল-কলেজ। অতিমারি রুখতে গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে দফায় দফায় লকডাউন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। লকডাউনের সময় পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনলাইন ক্লাস। তবে সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, প্রায় অর্ধেকেরও বেশি স্কুলপড়ুয়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক ভাবে শক্তিশালী নয়।
শিশুদের শিক্ষার প্রসারে কাজ করে এমন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার দাবি, শুধুমাত্র প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলপড়ুয়াই নয়, শহর অঞ্চলেও প্রায় একই অবস্থা। শহরের বহু বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের ঘরে ইন্টারনেটের যোগাযোগ থাকলেও তা দ্রুতি গতির নয়। বহু ক্ষেত্রেই বার বার নেট-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সমস্যাও রয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ পড়ুয়ার পরিবার আবার মোবাইল ডেটার খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছেন।
অতিমারি আবহে দেশে দূরশিক্ষার বেহাল দশা তুলে ধরেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনস (আইসিআইআইইআর) এবং লাইন এশিয়ার যৌথ সমীক্ষাও। দুই সংস্থাই কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজিটাল নীতির মূল রূপরেখা তৈরিতে যুক্ত রয়েছে। তাদের সমীক্ষায় দাবি, অতিমারির সময় দেশের মাত্র ২০ শতাংশ স্কুল পড়ুয়ার কাছে দূরশিক্ষার সুবিধা ছিল। তার মধ্যে অর্ধেক পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসে যোগ দিয়েছে। অতিমারির সময় ৩৮ শতাংশ পরিবারেই স্কুলছুটদের সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানিয়েছে ওই সমীক্ষার রিপোর্ট।
শিক্ষা জগতে ডিজিটাল বিভাজনের প্রকট রূপ ছাড়াও লিঙ্গ বৈষম্যের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বহু বিশেষজ্ঞ। অমৃতা সিংহ নামে এক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘অতিমারির সময় পড়াশোনার জন্য ডিজিটাল মাধ্যমের হাত ধরাই যুক্তিযুক্ত ছিল। তবে ভবিষ্যতে তা আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা হিসাবে গড়ে তুলতে হলে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।’’ সে কথাই উল্লেখ করেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঙ্গীতা গাড়দে। তিনি মনে করেন, ‘‘ডিজিটাল বিভাজনের কথা বলতে গেলে এটাও মনে রাখতে হবে যে এই পরিসরে তুলনামূলক ভাবে মেয়েরাই সবচেয়ে বঞ্চিতদের দলে রয়েছে।’’ অন্য দিকে, ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর ইউনিভার্সাল এডুকেশন-এর ফেলো ঊর্বশী সাহনির মনে, ‘‘এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে হাতের মুঠোয় ইন্টারনেটের সংযোগ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। একে এখন আর বিলাসিতা বলে গণ্য করা যায় না।’’ তবে শিক্ষা মহলের একাংশের ধারণা, চিরাচরিত শিক্ষাদানের বিকল্প গড়ে ওঠেনি। তাকে এখনও চ্যালেঞ্চ ছুড়ে দিচ্ছে ডিজিটাল বিভাজন।