আইবি প্রধান অরবিন্দ কুমার।
কেন্দ্রের সঙ্গে এনএসসিএনের শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী আর এন রবি নাগাল্যান্ডের রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে এনএসসিএন আইএমের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়েছিল। যার জেরে ‘শেষ হওয়া’ শান্তি আলোচনা ফের শুরু হয়েছে। চুক্তি বিশ বাঁও জলে। নাগাড়ে রাজ্য সরকারের নিন্দা করে, এনএসসিএনকে ‘সশস্ত্র তোলাবাজ’ বলে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছেন রবি। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর আইবি প্রধান অরবিন্দ কুমার এবং আইবির বিশেষ ডিরেক্টর অক্ষয়কুমার মিশ্রকে আলোচনাকে সঠিক দিশায় আনার অতিরিক্ত দায়িত্ব দিল।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ইন্দো-নাগা শান্তি চুক্তির খসড়া মহা আড়ম্বরে ২০১৫ সালে সই করিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত বছর শান্তি আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে বলেও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রবি এবং আইএম নেতাদের মধ্যে চুক্তির শর্তাবলি নিয়ে রফা না-হওয়ায় আইএম নেতা মুইভা নাগাড়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রীর দফতর তাই আলোচনার ব্যাটন হস্তান্তর করল।
ষদিও এই রবিই এক সময়ে আইএম শুধু নয়, সব ক’টি নাগা সংগঠনকে একজোট করে আলোচনার শরিক করেছেন। মায়ানমারে থাকা খাপলাং গোষ্ঠীকে দু’বার বিভাজিত করে প্রথমে খাংঘো কন্যাক ও সম্প্রতি ইয়ুং অংকেও আলোচনার দিকে টানতে সফল হন রবি। তাই আইএম রবির নিন্দা করলেও অন্য সংগঠনগুলি রবির পক্ষে রয়েছেন।
রাজ্যপাল হওয়ার পরে রবি দেখেন, সশস্ত্র আইএম জঙ্গিরা ‘বিপ্লবী কর’ নাম নিয়ে সরকারি-বেসকারি দফতর ও জনতার কাছ থেকে তোলা আদায় করছে। নীরবে মদত দিচ্ছে রাজ্য। সেই কথা উল্লেখ করে বিবৃতি দেন রবি। আইএমকে সশস্ত্র তোলাবাজ বলেন। স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতাতেও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন রাজ্য সরকারের। ফলে রাজ্য সরকারও রবির বিপক্ষে।
মুইভা এ দিকে প্রস্তাবিত সম্ভাব্য চুক্তির শর্ত ফাঁস করে জানান, চুক্তির মূল আদর্শই ছিল সার্বভৌম সহাবস্থান। কিন্তু এখন রবি পৃথক পতাকা ও সংবিধান না-মানায় চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, নাগারা কখনও ভারতের অংশ হিসেবে থাকবে না। রবিও অনড়, দেশের মধ্যে স্বাধীন দেশ, স্বতন্ত্র পতাকা ও সংবিধান থাকতে পারে না।
এ বার দেখার, নতুন মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনাকে শান্তি চুক্তির দিকে কী ভাবে এগিয়ে নেন।
কংগ্রস সাংসদ ও মুখপাত্র শক্তিসিন গোহিল এ প্রসঙ্গে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীকে ফোন করে জানালেন নাগা চুক্তি হয়ে গিয়েছে। পরে জানা গেল, তা ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। তখন চুক্তির শর্তাবলি জানানো হয়নি। এখন জানা যাচ্ছে, দেশের মধ্যেই স্বাধীন ও সার্বভৌম নাগালিম গড়া, পৃথক পতাকা ও সংবিধানের কথা শর্তের মধ্যে ছিল। তাঁর প্রশ্ন আরএসএস তো বহু বছর তাদের দফতরে তেরঙা ওড়ায়নি। এ বার দেশের মধ্যেই অন্য জাতীয় পতাকা ওড়াতে দিয়ে তারা কি নতুন উদাহরণ তৈরি করতে চাইছে?” তিনি জানতে চান, প্রস্তাবিত বৃহত্তর নাগালিমের মধ্যে অসম-মণিপুর-অরুণাচলের বিভিন্ন অংশ তো বটেই, মায়ানমারেরও অনেকটা অংশ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে কথা না-বলে প্রধানমন্ত্রী একাই কী ভাবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?