ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর বিজ্ঞানী ছিলেন হরি নাথ। ১২ বছর কাজ করেছেন ডিআরডিও-তেই। ২০০৫ সালে ডিআরডিও বিজ্ঞানী হরি নাথ আমেরিকায় গিয়ে দু’বছরের জন্য একটি গবেষণা করার অনুমতি পেয়েছিলেন।
সে সময়ে দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন আব্দুল কালাম। তাঁর কথাতেই দু’বছরের জন্য ছুটি পেয়েছিলেন হরি নাথ।
তবে বিদেশে গিয়ে গবেষণার করার আগে একটা শর্ত বেঁধেও দিয়েছিলেন কালাম। দু’বছর পর দেশে ফিরে আসতে হবে, গবেষণা দেশের কাজে লাগাতে হবে। ঘাড় নেড়ে তাতে সায় দিয়েছিলেন হরি নাথ।
ক্যারোলিনা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে তিনি রিসার্চ শুরু করেন। প্রচুর নতুন নতুন ওষুধ তৈরি করেন। আর তার জন্য প্রচুর পুরস্কারও পান। কিন্তু একটা সময় এই গবেষণার প্রতি তাঁর ধারণা বদলে যায়।
তাঁর ওষুধ তো সাধারণ মানুষদের তেমন উপকারে আসছে না, গবেষণার ফায়দা নিচ্ছিল নামী দামি ওষুধ কোম্পানিগুলো।
এর কয়েক বছর পর একটা ঘটনা তাঁর জীবন পুরোপুরি পাল্টে দেয়। একদিন ভারত থেকে তাঁর মা ফোনে নিজের অসুস্থতার কথা জানান।
মা আর্থারাইটিস আর স্পনডিলাইটিসের অসহ্য যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন তখন। হরি নাথ মাকে চিকিৎসকের কাছে পাঠালেও তেমন কোনও লাভ হয়নি। যন্ত্রণার বিন্দুমাত্র নিরসন হয়নি।
এ রকমই এক কষ্টের রাতে আর সহ্য করতে না পেরে হরি নাথকে ফোন করে কেঁদে ফেলেন তাঁর মা।
কী করবেন বুঝতে না পেয়ে বই ঘেঁটে একটা উপায় খুঁজে পান হরি নাথ। জাপানি এক বহু পুরনো বইয়ে তিনি উপশমের জন্য মরিঙ্গা নামে এক গাছের সন্ধান পান।
ম্যাজিকের মতো কাজ করল মরিঙ্গা গাছের পাতার রস! এই পাতার রস নিয়মিত সেবন করার ফলে এক মাসের মধ্যেই মায়ের সমস্ত যন্ত্রণা যেন গায়েব হয়ে গেল।
২০১৫ সালে মায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি অন্ধ্রপ্রদেশে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। মরিঙ্গা পাতার উপর রিসার্চ শুরু করেন।
মরিঙ্গার সঙ্গে আরও কিছু হার্বস দিয়ে মরিঙ্গার পাউডার বানান তিনি। সেগুলো স্থানীয়দের মধ্যে দিতে শুরু করেন।
আশ্চর্যজনক ভাবে খুব ভাল কাজ দেয় সেগুলি। তখনই একটা বিষয় নাড়া দেয় তাঁর মনে। ওষুধ তো তৈরি হয় এই সমস্ত গুল্ম থেকেই। তা হলে অহেতুক ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে জোর দিলেই তো অসুখ এড়ানো যায়!
নিজের জমিতেই চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে মরিঙ্গা, আমলকি, কারিপাতা এবং মরসুমি সব্জি ফলান।
সার হিসাবে কাজে লাগান গোবর, গোমূত্র, সব্জির খোসা ইত্যাদি। আব্দুল কালাম সে দিন নিজের দেশে ফিরে আসার শর্ত না চাপালে হয়তো এই দিনটা কোনওদিন আসত না তাঁর জীবনে, মনে করেন হরি নাথ।