রামের মন্দির নিয়ে সাধুসমাজে খেয়োখেয়ি

তপস্বী ছাউনির মহন্ত পরমহংস দাসের অভিযোগ, রামমন্দির তৈরির দাবিতে তিনি জেলে গিয়েছেন, আমরণ অনশনেও বসেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক জনের নাম শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন অন্য জন। নিন্দেমন্দ তো আছেই, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’কে তাক করে বাদ যাচ্ছে না গালিগালাজও। এমনকি হত্যার চক্রান্তের অভিযোগও উঠছে! রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে এত দিন কোমর বেঁধে লড়াইয়ের পরে এ বার তার চাবির দখল নিয়ে অযোধ্যার সাধুদের মধ্যে যুদ্ধ ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে।

Advertisement

তপস্বী ছাউনির মহন্ত পরমহংস দাসের অভিযোগ, রামমন্দির তৈরির দাবিতে তিনি জেলে গিয়েছেন, আমরণ অনশনেও বসেছেন। কিন্তু এখন মন্দিরের জন্য সরকারের গড়া অছি পরিষদে (ট্রাস্ট) তাঁর শামিল হওয়া রুখতে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে রামমন্দির ন্যাস। পরমহংস দাসের কথায়, ‘‘আমাকে হত্যার জন্যই লোক পাঠিয়েছিলেন ন্যাসের প্রধান নিত্যগোপাল দাস। তারা এসে ভাঙচুর চালিয়েছে। বাদ রাখেনি গালিগালাজও।’’ ন্যাসের সদস্য রামবিলাস বেদান্তী পরিষদের মাথায় বসতে চান বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

১৯৪৯ সালে বিতর্কিত জমিতে মূর্তি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকে করসেবা— আগাগোড়া রামমন্দির আন্দোলনে জড়িয়ে থাকা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সমর্থিত ন্যাসের সদস্য বেদান্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘রামমন্দির নির্মাণের সমস্ত কৃতিত্ব একাই ঝুলিতে পুরতে চান পরমহংস। সেই কারণে আমাকে, নিত্যগোপালকে এবং (উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী) যোগী আদিত্যনাথকে বদনাম করতে এই সব অপবাদ দিচ্ছেন, চক্রান্ত করছেন।’’

Advertisement

ঘটনার জল এত দূর গড়িয়েছে যে, তপস্বী ছাউনি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে পরমহংসকে। শোনা যাচ্ছে, এখন বারাণসীতে বসে নতুন করে ‘ঘুঁটি সাজাচ্ছেন’ তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, অযোধ্যায় রামলালা বিরাজমানের মন্দির তৈরির দায়িত্ব নিক কেন্দ্রের গঠিত ট্রাস্ট। এর পর থেকেই বিভিন্ন মঠ, আখড়া, মন্দিরে আলোচনা, কে কে থাকবেন ওই ট্রাস্টে? কার হাতে থাকবে মন্দিরের ‘চাবি’? কে তুলবেন মন্দির গড়ার টাকা? সেই টাকার সিন্দুকই বা থাকবে কার জিম্মায়? সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, মুখে এ সব কথা না বললেও মূলত এই কারণেই নিজেদের ঝগড়া লুকোতে পারছেন না সাধুরা।

ন্যাসের প্রধান নিত্যগোপাল দাসের গোড়া থেকেই দাবি, “মন্দির ন্যাসই তৈরি করুক। তা পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হোক তাদের। সরকার শুধু পাশে থাকুক। গড়ুক পরিকাঠামো।” তাঁর যুক্তি, মন্দির গড়বেন ধরে নিয়েই বিতর্কিত জমির কাছে সেই ১৯৯০ সাল থেকে প্রায় ৭০% কাজ সেরে রেখেছেন তাঁরা। মন্দিরের রাশ যাতে হাতছাড়া না-হয়, সেই কারণে তাঁরা ন্যাসের ঠিক করে রাখা নকশাতেই মন্দির তৈরির পক্ষপাতী।

যে নির্মোহী আখড়া ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত বিতর্কিত চত্বরে পূজা চালিয়ে গিয়েছে, তাদেরও পরিষদে শামিল করার বিরোধী ন্যাস। আবার নির্মোহী আখড়ার মহন্ত দীনেন্দ্র দাসদের পাল্টা ইঙ্গিত, ন্যাসের চোখ মন্দিরের তহবিলে। এর আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে যে ওই তহবিলের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল, এখন তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। করসেবকদের কেউ চান ট্রাস্টে থাকুন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আবার কেউ বলছেন, ট্রাস্টে থাকুন শুধু সাধুসন্তরা।

স্থানীয় সূত্রে শোনা যাচ্ছে, সাধুরা জানেন, বিতর্কিত ২.৭৭ একরের বাইরে আরও ৬৭ একর জমি রামমন্দিরের হাতে আসার সম্ভাবনা। তার উপরে এত প্রচারের আলোয় থাকা মন্দির। দেশে-বিদেশে এত ভক্ত। সব মিলিয়ে মন্দিরের কোষাগার দ্রুত ফুলেফেঁপে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা।

প্রশ্ন উঠছে, সেই কারণেই কি এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে নারাজ কোনও পক্ষ?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement