গুজরাতের রাজধানী গাঁধীনগর রেলস্টেশন ঢেলে সাজা হয়েছে। শুক্রবার তা খুলে দেওয়া হল সাধারণের জন্য। নতুন স্টেশনটিতে সময়োপযোগী নানারকম প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। রেল জানিয়েছে, এতে স্টেশনটির পুনরুন্নয়ন হয়েছে। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের উন্নততর পরিষেবা দিতেই এই ব্যবস্থা।
যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যই গাঁধীনগর রেল স্টেশনের শেষ কথা। রেলে যাঁরা সফর করবেন, তাঁদের সব রকম প্রয়োজন আর সুযোগ সুবিধাকে নজরে রেখে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের কথাও ভেবেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় রেল এবং গুজরাত সরকারের যৌথ প্রকল্পে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে এই রেল স্টেশনের। লক্ষ্য ছিল স্টেশন ও তার সংলগ্ন এলাকাকে একটি দর্শনীয় স্থান করে তোলা। যাতে শুধু যাত্রীরাই নন, স্টেশনটিকে আলাদা করে দেখতেও আসেন পর্যটকরা। রেলের কথায় সেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। ঠিক কী কী বিশেষ সুবিধা থাকছে নবনির্মিত এই রেলস্টেশনে? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
স্থানীয় পরিবেশ এবং সুযোগ সুবিধার কথা মাথায় রেখে উন্নতি করা হয়েছে স্টেশনের। ভিড়ের কথা মাথায় রেখে প্রশস্ত করা হয়েছে স্টেশনের প্রবেশ চত্বরটি। যেখানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ যাত্রীর স্থান সঙ্কুলান হবে অনায়াসে।
স্টেশনের সামনে থাকবে ‘কনকোর্স’। বিমানবন্দরের আদলের এই ‘কনকোর্স’ আসলে স্টেশনের লাগোয়া বড় উঠোনের মতো চত্বর। এই ‘কনকোর্স’-এর কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তবে রেল সূত্রে দাবি, কাজ শেষ হলে প্রায় ২ হাজার ২০০ যাত্রীর ভিড় সামাল দিতে পারবে গাঁধীনগর রেল স্টেশন।
দ্রুত যাতে টিকিট কাটা যায়, সেই বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে টিকিট কাউন্টারের আধুনিকীকরণও করা হয়েছে।
গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্টেশনের বাইরের সৌন্দর্যায়নেও। বিভিন্ন ‘থিম’ অর্থাৎ ভাবনার উপর ভিত্তি করে নানারকম আলোয় সাজছে গাঁধীনগর স্টেশন। সূর্যাস্তের পর স্টেশনটির দেওয়ালে ক্যানভাসের মতোই নানারকম ছবি ফুটিয়ে তোলা হবে আলোর সাহায্যে। রেল জানিয়েছে, এই আলোর ছবি আরও আকর্ষণীয় হবে যখন স্টেশনের আলো উল্টোদিকের ডান্ডি কুটিরের আলোর সঙ্গে মিলবে। ৭৭ মিটার উচ্চতার এই ভবনটির দেওয়ালে আলোর খেলা দেখার মতো হবে বলে জানিয়েছে রেল।
স্টেশন চত্বরে থাকবে আর্ট গ্যালারিও। এই গ্যালারিতেও ভাবনার বৈচিত্র দেখা যাবে। ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীরা গ্যালারির লাগোয়া বিরাট এলইডি পর্দায় জেনে নিতে পারবেন বিষয়ভিত্তিক নানা খবর এবং তথ্যও।
থাকবে বিমানবন্দরের মতো ‘সেন্ট্রালাইজড এসি ওয়েটিং লাউঞ্জ’। যেখানে ৫০০ জন যাত্রীর বিশ্রামের জায়গা থাকছে। অপেক্ষারত যাত্রীদের জন্য সেখানে থাকবে একাধিক সুযোগ সুবিধা।
বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য পার্কিং লট থেকে স্টেশনে ঢোকার জন্য থাকছে র্যাম্প, এছাড়া আলাদা এসক্যালেটর। আলাদা লিফটও।
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে যাতে প্রার্থনার সময়ে ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রেখে স্টেশন চত্বরেই রাখা হয়েছে সবধর্মের প্রার্থনা-ঘর।
জনসমক্ষে সন্তানদের খাওয়ানো মায়েদের পক্ষে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তাঁদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে স্টেশন চত্বরেই রাখা হয়েছে আলাদা বাতানুকূল ঘর। নাম বেবি ফিডিং রুম।
এছাড়া প্ল্যাটফর্মে বসার ব্যবস্থা থাকবে ৪০০ জনের। স্টেশনের ব্যাপ্তির কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে একাধিক সাবওয়ে। পার্কিংয়ের জন্যও বরাদ্দ করা হয়েছে অনেকখানি জায়গা।
গাঁধীনগর দেশের প্রথম প্ল্যাটফর্ম হতে চলেছে, যেখানে প্ল্যাটফর্মের ছাদ ধরে রাখার থাম প্ল্যাটফর্মের উপর থাকবে না। ফলে ভিড়ের সময় অসুবিধায় পড়তে হবে না যাত্রীদের।
যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনের সঙ্কেতগুলিকেও উন্নত আর সহজবোধ্য করা হয়েছে। অত্যাধুনিক শৌচাগার থাকছে। জলের অপচয় বন্ধ করার ব্যবস্থাও করেছে রেল।
স্টেশনের ভিতরেই থাকবে বিভিন্ন রিটেল ব্র্যান্ডের মিনি আউটলেট বা ছোট ছোট দোকান। এমনকি বিভিন্ন নামি সংস্থার খাবার এবং মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও থাকবে স্টেশন চত্বরেই। ইতিমধ্যেই বিগ বাজার, শপার স্টপের মতো ব্র্যান্ড এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। রেল জানিয়েছে স্টেশনটিকে ‘সিটি সেন্টার রেল মল’ হিসেবে বানাতে চাইছে তারা।
এই প্রথম কোনও রেল স্টেশনের উপরে থাকছে পাঁচতারা হোটেল। গাঁধীনগর রেল স্টেশনের উপর ওই হোটেল বানিয়েছে ভারতীয় রেল। আধুনিক সবরকম ব্যবস্থা থাকবে সেখানে অতিথিদের জন্য। ৭ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের ওই হোটেলটিতে ৩১৮টি ঘর আছে। যা তৈরি করতে ৭৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রেলের।
হোটেলের সঙ্গেই থাকছে রেস্তরাঁ। পুরনো রেলের কামরার আদলে সাজানো সেই রেস্তরাঁয় থাকছে পাঁচতারার মানের পরিষেবার ব্যবস্থা।
তবে শুধু গাঁধীনগর নয়। আগামী দিনে আরও বহু স্টেশন এভাবেই সাজানোর কথা ভাবছে রেল। তারা জানিয়েছে দেশের মোট ১২৫টি স্টেশন এভাবে সাজানো হবে। এর মধ্যে ভোপাল এবং বেঙ্গালুরুর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজ চলছে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা, দিল্লির বিজবাসন, সফদরজং, লখনউয়ের গোমতি নগর এবং নাগপুরের আজনী রেল স্টেশনের।