আগে ট্রেনে জেনারেটর ব্যবহার করে ইউনিট-পিছু বিদ্যুতের জন্য খরচ পড়ত প্রায় ১৫ টাকা। এখন সেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য সাড়ে ছ’টাকার কম খরচ হচ্ছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। এই অবস্থায় দূরপাল্লার বাতানুকূল ট্রেনে ডিজেলচালিত জেনারেটর কার ব্যবহার বন্ধ করার পথে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। আপৎকালীন পরিস্থিতি ছাড়া ওই কার ব্যবহার না-করে ১৩টি দূরপাল্লার ট্রেন থেকে মাসে ৬০ লক্ষ টাকা সাশ্রয় করছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।
নতুন প্রযুক্তিতে ট্রেনের বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে বসানো কনভার্টার একসঙ্গে দু’রকম কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। ট্রেন টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তিশালী মোটরে বিদ্যুতের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি কামরার আলো, পাখা, বাতানুকূল ব্যবস্থা-সহ নানান যন্ত্র চালু রাখার জন্যও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। ফলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সাময়িক ভাবে ব্যবহার ছাড়া সে-ভাবে আর জেনারেটর কারের প্রয়োজন পড়ছে না। ভবিষ্যতে ওই প্রযুক্তিতে আরও অগ্রগতি ঘটলে জেনারেটর কারের ব্যাবহার ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে রেল সূত্রের খবর।
দুরন্ত, রাজধানী বা শতাব্দীর মতো সম্পূর্ণ বাতানুকূল ট্রেনের ক্ষেত্রে এত দিন দু’টি করে জেনারেটর কার ব্যবহার করা হত। সম্প্রতি সেই জায়গায় আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কামরার বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালু রাখার জন্য একটি করে জেনারেটর কার ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি ট্রেনে পুশ-পুল ব্যবস্থায় দু’টি করে ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু হলে আর জেনারেটর কারের প্রয়োজন না-ও পড়তে পারে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল জানাচ্ছে, গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে পাঁচটি বাতানুকূল কামরা এবং অন্যান্য কামরার জন্য একটি জেনারেটর কার ব্যবহার করা হত। তাতে ঘণ্টায় ডিজেল খরচ হত ৫০ লিটার। হাওড়া-মুম্বই দুরন্তের মতো সম্পূর্ণ বাতানুকূল ট্রেনে দু’টি জেনারেটর কার ব্যবহার করা হত। মুম্বই যাওয়া-আসার জন্য মোট ৬৫ ঘণ্টার যাত্রাপথে ওই ট্রেনে প্রায় চার লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার তেল পুড়ত। রেলকর্তাদের দাবি, ওই খরচের প্রায় পুরোটাই এখন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে।
সাঁতরাগাছি-আনন্দবিহার, হাওড়া-টাটানগর, হাওড়া-এর্নাকুলাম অন্ত্যোদয়, সাঁতরাগাছি-জবলপুর হামসফর, হাওড়া-তিরুপতি হামসফর-সহ ১৩টি ট্রেনে নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। রেলকর্তাদের দাবি, ওই সব ট্রেনের মধ্যে একাধিক ট্রেন সাপ্তাহিক। যে-সব ট্রেন প্রতিদিন চলে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা পুরো মাত্রায় চালু হলে সাশ্রয় আরও বেশি হবে।
জেনারেটর কার কমিয়ে তার জায়গায় অতিরিক্ত যাত্রিবাহী কামরা যোগ করা গেলে রেলের আয় আরও বাড়বে। সারা দেশে বেশ কয়েকটি শতাব্দী এক্সপ্রেসে ইতিমধ্যেই ওই ব্যবস্থা চালু করে সুফল মিলতে শুরু করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘জেনারেটর ব্যবহার বন্ধ হলে অনেক দিক থেকেই লাভ। জ্বালানির খরচ ছাড়াও পরিবেশগত লাভ রয়েছে। বাড়তি যাত্রী পরিবহণ থেকেও আয় বাড়তে পারে।’’
প্রায় দু’দশক ধরে চেষ্টা চালানোর পরে এখন রেলের চিত্তরঞ্জন লোকামোটিভ ওয়ার্কসেই নতুন প্রযুক্তির ডব্লিউএপি-৭ সিরিজের ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে ওই ইঞ্জিনের জোগান বাড়লে রেলের আরও অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।