ফাইল চিত্র।
ট্রেনের রুট, স্টেশনের পরে এ বার রেলের অব্যবহৃত জমি আবাসন ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রেল। লক্ষ্য বেসরকারিকরণের মাধ্যমে রেলের আয় বাড়ানো। প্রাথমিক ভাবে দিল্লি, কানপুর-সহ রেলের বিভিন্ন জোনে থাকা অব্যবহৃত জমি নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। তাদের আশা, জমি নিলাম করে চড়া দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু আর্থিক মন্দার আবহে আবাসন সংস্থাগুলি এগিয়ে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তা ছাড়া, নির্মাণ হলেও যথেষ্ট ক্রেতা মিলবে কি না তা নিয়েও সংশয়।
রেলের যুক্তি, আগামী দিনে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে বাসস্থান করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই পরিকল্পনা রূপায়ণেই এগিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। মন্ত্রকের মতে, ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এক দিকে দেশবাসীকে সাধ্যের মধ্যে বাড়ি দেওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে, তেমনি অব্যবহৃত জমির মাধ্যমে রাজস্ব ঘাটতি মেটানো যাবে।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে নয়াদিল্লির অশোক বিহার এলাকার ১০.৭৬ হেক্টর, করোল বাগ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ১৫.২ হেক্টর ও কানপুরের গোয়ালতলির কাছে ১.৪৮ হেক্টর জমি আগামী ৯৯ বছরের জন্য আবাসন ব্যবসায়ীদের হাতে লিজে তুলে দেওয়া হবে। ওই তিনটি প্রকল্প থেকে যথাক্রমে ন্যূনতম ১২৮০ কোটি, ১৮৬২ কোটি ও ৬২ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে রেল। ইচ্ছুক সংস্থাগুলিকে আগামী ২১ অক্টোবর দরপত্র সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। রেল ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ছাড়া আমজনতাও ওই ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। ১৫ শতাংশ ফ্ল্যাট সংরক্ষিত থাকবে আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য। ১০-১৫ শতাংশ ফ্ল্যাটের মালিকানা পাবে আবাসন সংস্থাগুলি। ওই ফ্ল্যাটগুলি বাজারদরে বিক্রি করে আবাসন সংস্থাগুলি লাভ ঘরে তুলতে পারবে।
এই পরিকল্পনায় সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের যুক্তি, নোটবাতিল ও জিএসটি চালুর পর থেকে আবাসন শিল্পে মন্দা। দেশের বড় শহরগুলিতে অসংখ্য বাড়ি-ফ্ল্যাট তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একাধিক বার সুদ কমালেও আবাসন শিল্পের হাল বিশেষ পাল্টায়নি। অদূর ভবিষ্যতে ছবিটা যে পাল্টাবে, এমন ভরসাও দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞেরা। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে আবাসন শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ করতে সংস্থাগুলি কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রেলের অন্দরে। তবে রেল আধিকারিকদের একাংশের যুক্তি, দিল্লি, কলকাতা বা মুম্বইয়ের মতো শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা রেলের জমিকে চিহ্নিত করে তাতে আবাসন গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তাই বাণিজ্যিক ভাবে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
লালুপ্রসাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) মডেলে রেলের জমিতে কারখানা, হাসপাতাল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই লক্ষ্যে গড়া হয় রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। চিহ্নিত হয় অব্যবহৃত জমিও।
কিন্তু গত এক দশকে তেমন কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এক রেল আধিকারিকের যুক্তি, ‘‘রেলের হাতে প্রচুর জমি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ কারখানা বা হাসপাতাল গড়ার জন্য এক লপ্তে অনেকটা জমি প্রয়োজন। তা জোগাড়ে সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু ফ্ল্যাট নির্মাণে ছোট আকারের জমি হলেও চলে। তাই অর্থনীতির চাকা একটু গড়ালেই ছবিটা পাল্টাবে বলে আশা করা যায়।’’