রাফাল যুদ্ধবিমান। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর ফ্রান্স সফরের আগে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ফের অস্বস্তিতে পড়ল দিল্লি। এক ফরাসি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ী সুষেণ গুপ্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন ফরাসি ম্যাজিস্ট্রেট। ভারতে রাফালের বরাত পাওয়ার জন্য এই সুষেণ গুপ্তকেই ওই যুদ্ধবিমানের প্রস্তুতকারক সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন বিপুল অর্থ দিয়েছে বলে অভিযোগ ফরাসি তদন্তকারীদের। পাশাপাশি রাফাল কেনার চুক্তিতে দাসো অ্যাভিয়েশনের অংশীদার অনিল অম্বানীর ফ্রান্সে পাওয়া কর ছাড় নিয়েও নয়া তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
২০১৫ সালে ফ্রান্স সফরের সময়ে রাফাল কেনার আগের চুক্তি বাতিল করে দাসোর কাছ থেকে সরাসরি ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেন মোদী। সেই সফরে মোদীর সঙ্গে ফ্রান্সে যান অনিল। ওই চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু ফ্রান্সে দাসোর তরফে সুষেণকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে। আসন্ন ফ্রান্স সফরে বাস্তিল দিবসের উৎসবে যোগ দেওয়ার কথা মোদীর। ওই উৎসবের সময়ে কুচকাওয়াজে যোগ দেবে ভারতীয় বায়ুসেনার রাফাল।
ভারতে রাফাল দুর্নীতির তদন্ত না হলেও ভিভিআইপি-দের জন্য কপ্টার কেনার চুক্তিতে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে ইডি। তাতেও অভিযুক্ত সুষেণ। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ভারতীয় গোয়েন্দাদের তদন্তেও দাসোর সঙ্গে সুষেণের বিপুল লেনদেনের খোঁজ মিলেছে। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় গোয়েন্দাদের তদন্তের রিপোর্ট চেয়ে ভারতকে অনুরোধ করেছেন সংশ্লিষ্ট ফরাসি ম্যাজিস্ট্রেট।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির আরও দাবি, রাফালে দাসোর সহযোগী অনিল অম্বানীর অন্য একটি সংস্থাকে বিপুল কর ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল ফরাসি সরকার। ১৫ কোটি ১০ লক্ষ ইউরোর কর কমাতে তৎকালীন ফরাসি অর্থনীতি মন্ত্রী (এখন প্রেসিডেন্ট) ইমানুয়েল মাকরঁ ও অর্থমন্ত্রী মিশেল স্যাপাঁর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লেখেন অনিল অম্বানী। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সে ৬৬ লক্ষ ইউরো কর দেন অনিল। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির দাবি, এই বিষয়ে তখন মাকরঁকে চিঠি লেখা কিছুটা বিস্ময়কর। কারণ, অর্থনীতি মন্ত্রীর এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কথা নয়।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ফ্রান্সে অম্বানীর কর ফাঁকির কথা জানতে পেরে বিপুল অঙ্কের কর ও জরিমানা ধার্য করেন ফরাসি কর কর্তৃপক্ষ। এ ভাবে অম্বানীর সংস্থার কাছ থেকে কর ফাঁকি সংক্রান্ত নথি পেতে চেয়েছিলেন তাঁরা। সেই নথি দিয়ে অনিল অম্বানীর সংস্থা জানায়, ৬২ লক্ষ ইউরো কর দিতে রাজি তারা। ফরাসি কর কর্তৃপক্ষ জানান, পরিমাণটি খুবই কম। কিন্তু তার পরেই গোপনে রাফাল চুক্তিতে দাসোর অংশীদার হন অম্বানী। সংবাদমাধ্যমটির মতে, এর পরে ফরাসি কর কর্তৃপক্ষ তথা সরকার সম্ভবত অম্বানীকে আর বিব্রত করতে চায়নি। ফলে দ্রুত ৬৬ লক্ষ ইউরোর কর দেওয়া নিয়ে সমঝোতা হয়।
প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদ আগেই দাবি করেছেন, ভারত সরকারের চাপেই অম্বানীকে দাসোর অংশীদার করা হয়। দাসো ও অনিল অম্বানী গোষ্ঠী সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন সম্পর্কে মাকরঁ বা তাঁর দফতর মুখ খুলতে রাজি হননি। মিশেল স্যাপাঁর দাবি, অম্বানীর চিঠির কথা তাঁর মনে নেই।