P. Chidambaram

‘অযোগ্য হাতে ধ্বস্ত অর্থনীতি’

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে সবার আগে চাহিদার চাকায় গতি ফেরানোর কথা বলেছেন প্রথম সারির প্রায় সমস্ত অর্থনীতিবিদ। সেখানে সারা দুনিয়ায় তার উল্টো পথে হাঁটছেন শুধু এই পাঁচ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১৪
Share:

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ছবি পিটিআই।

প্রথম জন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দ্বিতীয়, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। তৃতীয়, নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ। চতুর্থ, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা লিখে দেন। আর পঞ্চম জন? এমনকি তাঁরও নাকি সন্ধান মেলেনি এখনও!

Advertisement

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে সবার আগে চাহিদার চাকায় গতি ফেরানোর কথা বলেছেন প্রথম সারির প্রায় সমস্ত অর্থনীতিবিদ। সেখানে সারা দুনিয়ায় তার উল্টো পথে হাঁটছেন শুধু এই পাঁচ জন। আর সেই ‘অযোগ্য পরিচালনার’ কারণেই আজ ভারতীয় অর্থনীতির এই করুণ দশা।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন— দীর্ঘদিন ধরে সকলেরই বক্তব্য, অর্থনীতির ঝিমুনি ও কোভিডের ধাক্কা কাটাতে চাহিদা চাঙ্গা করার দাওয়াই জরুরি। তার জন্য হাতে টাকা দেওয়া প্রয়োজন দরিদ্র, নিম্নবিত্ত মানুষের। যাতে তা দিয়ে বাজারে কেনাকাটা বাড়ে। কিন্তু চিদম্বরমের আক্ষেপ, ‘‘মানুষের আয় কমে গিয়েছে। রুজিরুটি খুইয়েছেন অনেকে। বাজারে চাহিদা বাড়ন্ত। অথচ তখন মাত্র এই পাঁচ জন আঁকড়ে ধরে রয়েছেন জোগান বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার তত্ত্ব!’’

Advertisement

বাজেটের আগে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের আর্থিক বিষয়ক কমিটি দাবি তুলেছিল, সাধারণ মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া হোক। গরিবের জন্য বিনামূল্যে রেশন চালু থাকুক। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘সরকার এ বার বাজেটে গরিব মানুষের কথা ভাবেইনি। এই বাজেট ধনীদের। ধনীদের লাভের জন্য। ধনীদেরই তৈরি করা।’’

বাজেটে সীতারামন জিডিপির বহর বাড়াতে পরিকাঠামোয় বিপুল খরচ বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় তাঁর সামনেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন, বাজেটে পরিকাঠামোয় মাত্র ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা খরচ বাড়িয়ে কী ভাবে দেশের জিডিপি ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বাড়ানোর আশা করছে মোদী সরকার?

চিদম্বরমের অভিযোগ, অর্থনীতির ‘অযোগ্য পরিচালনার’ জন্যই কোভিডের দু’বছর আগে থেকে অর্থনীতিতে ঝিমুনি চলছিল। অতিমারি তাকে গভীর মন্দার মুখে ঠেলে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ‘অযোগ্য’ পরিচালনার জন্যই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়নি। কংগ্রেস নেতার কটাক্ষ, ‘‘অযোগ্যের থেকে কড়া শব্দ সংসদে ব্যবহার করা যায় না। তাই আমি এত কোমল শব্দ ব্যবহার করছি।’’

কোথায় ‘অযোগ্যতা’? চিদম্বরমের বক্তব্য, অর্থমন্ত্রী বাড়তি ১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছেন। অথচ তার মধ্যে মাত্র ৫১ হাজার কোটি পরিকাঠামোয় খরচ হচ্ছে। বাকি টাকা যাচ্ছে রাজস্ব খাতে বাড়তি খরচে। রাজস্ব আদায়ের অভাব মেটাতে। সেই সঙ্গে, বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের অভাব পূরণেও। তাঁর ভবিষ্যৎ বাণী, চলতি বছরের মতো আগামী বছরের বাজেটেও কোনও হিসেব মিলবে না। কারণ, রাজস্ব আদায় ও বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের লক্ষ্য অনেক বেশি ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দও যথেষ্ট নয়।

চিদম্বরম বলেছেন, আগামী বছরে মূল্যবৃদ্ধি-সহ আর্থিক বৃদ্ধির হার ১৪.৪% হবে বলে অর্থমন্ত্রীর অনুমান। কিন্তু তেমনই আগামী বছরে মূল্যবৃদ্ধির হার ৫%-৬% হবে। পাটিগণিত বলে, সে ক্ষেত্রে প্রকৃত বৃদ্ধির হার ৮.৪% বা ৯.৪% হবে।

একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন আগামী বছরের বৃদ্ধির হার ভাল দেখাচ্ছে, কারণ তার হিসেব কষা হচ্ছে এ বারের সঙ্কুচিত জিডিপির ভিত্তিতে। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী বছর ১০%-১১% বৃদ্ধি হবে বলে বড়াই করবেন না। বাস্তব হল, চলতি বছরে জিডিপি-কে আপনারা ২০১৭-১৮ সালের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কোভিডের আগেই অর্থনীতির করুণ দশা ছিল। অর্থনীতির অযোগ্য পরিচালনার জন্য এমনকি সেই উচ্চতা ফিরে পেতেও তিন বছর লেগে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement