ড্রেস-কোড: ডিগ্রি প্রাপকদের পোশাকের নমুনা। কানপুর আইআইটি ওয়েবসাইট থেকে।
ব্রিটিশ গিয়েছে অনেক দিন হল। তবু ঔপনিবেশিকতার পিছুটান কমবেশি রয়ে গিয়েছে আচার-আচরণে, পোশাকে, দিনযাপনে। অতি সচেতন ভাবে সেই পিছুটান থেকে বেরোতে চাইছে কানপুর আইআইটি। তাই এ বার সমাবর্তনের ‘ড্রেস কোড’ বা পোশাক-বিধি বদলে ফেলছে তারা। ইংরেজ আমলের কালো গাউনের জায়গা নিচ্ছে সাদা দেশি পোশাক।
কানপুর আইআইটিতে পঞ্চাশতম সমাবর্তন উৎসব আগামী সপ্তাহে। এ বারের সমাবর্তনে পড়ুয়ারা চিরাচরিত গাউন বা রোব এবং ক্যাপ পরবেন না। তার বদলে ছাত্রেরা পরবেন কুর্তা-পায়জামা আর ছাত্রীরা পরবেন কুর্তা-চুড়িদার। সঙ্গে থাকবে উত্তরীয়।
সমাবর্তনের পোশাক কেমন হবে, কানপুর আইআইটি-র ‘ডিজাইন প্রোগ্রাম’ বিভাগের শিক্ষক-পড়ুয়ারা মিলেই তা ঠিক করেছেন। প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা ইন্দ্রনীল মান্না জানান, ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকেই পোশাক বদলের দাবি উঠেছিল। ব্রিটিশ উত্তরাধিকার থেকে বেরিয়ে ভারতীয়ত্ব আনার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন পড়ুয়ারাই। তিনি বলেন, ‘‘আমি একটু দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু দেখলাম, ছাত্রছাত্রীরা খুবই উৎসাহী।’’ এই পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ নেই বলে জানান ইন্দ্রনীলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর কানপুর আইআইটির পঞ্চাশতম সমাবর্তন। সেই উপলক্ষে ট্রেন্ড সেট করা হল।’’
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই-এ ডিগ্রি প্রাপক পড়ুয়াদের পোশাকের উপরে খাদির তৈরি ঢিলেঢালা কুর্তা পরতে হয়। সেটাকে গাউনই বলা হয় আইএসআই-এ। চতুর্দশ শতকে ব্রিটেনে অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে গাউন এবং টুপি পরার চল শুরু হয়। দুনিয়া জুড়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাউন ও টুপি পরার রেওয়াজ আছে। দু’রকমের টুপি ব্যবহার করা হয়। শক্ত ‘মর্টার বোর্ড’ টুপি এবং নরম টুপি। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শক্ত টুপিই পরা হয়। কানপুর আইআইটি এ বার টুপিকেও বাদ দিচ্ছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পড়ুয়ারা পরেন গেরুয়া গাউন। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, আপাতত এই গাউন বদলের কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁদের। রাজ্যে তুলনামূলক ভাবে নবীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্সির সমাবর্তনে গাউনই পরা হয়। কর্তৃপক্ষ সেটা বদলাতে চান না। ‘‘এই গাউনই বেশ ভাল লাগে। এটা বদলানোর কোনও পরিকল্পনা আমাদের নেই,’’ বৃহস্পতিবার বললেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান পুরোটাই লাতিনে পরিচালিত হয় বলে জানালেন সুরঞ্জনবাবু। পোশাকে বদল আনার সিদ্ধান্ত নিলেও সমাবর্তনের ভাষায় কোনও পরিবর্তন আনছে না কানপুর আইআইটি। আগে সেখানে সংস্কৃত ও ইংরেজিতে শপথবাক্য পাঠ করা হতো। এখন হয় ইংরেজিতেই। এ বছর তার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রেসিডেন্সির সমাবর্তনে পড়ুয়ারা অবশ্য সংস্কৃত ও ইংরেজি দু’টি ভাষাতেই শপথবাক্য পাঠ করেন।