বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদুরিয়া
লাদাখে মোতায়েন চিনের সেনাকে পিছন থেকে সাহায্য করার জন্য বেজিং নিজের বায়ুসেনাকেও বিপুল ভাবে মোতায়েন করেছে। আজ ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আর কে এস ভাদুরিয়া জানিয়েছেন, চিনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ারফোর্স’ বড় সংখ্যক রেডার ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে।
বায়ুসেনা-প্রধান বলেন, ‘‘আসল বিষয় হল, চিন নিজের লক্ষ্য কতখানি পূরণ করতে পেরেছে, তা আমরা চিহ্নিত করে ফেলেছি।’’ চিন বিপুল পরিমাণে সেনা মোতায়েন করলেও বায়ুসেনা-প্রধানের দাবি, ভারতের সামরিক বাহিনী নিজের দিক থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। নিশ্চিত ভাবে আগামী দিনেও পরিস্থিতি সামাল দেবে। ভারতীয় বায়ুসেনা চিনকে তার নিজের এলাকাতেই আটকে দিয়েছে, এবং তারা যাতে সেখানেই আটকে থাকে, তা-ও নিশ্চিত করেছে বলে আজ ভাদুরিয়া জানিয়েছেন।
কী কারণে চিন লাদাখে আগ্রাসী নীতি নিল, আজ তারও বিশ্লেষণ করেছেন বায়ুসেনা-প্রধান। তাঁর মতে, চিন পরিকল্পিত ভাবে লাদাখে সেনা বাড়িয়ে নতুন নিয়ন্ত্রণ রেখা প্রতিষ্ঠা করে তার পরে দর কষাকষি করতে চেয়েছে। হতে পারে, চিন সামরিক বার্তা দিতে চেয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, চিন নিজের ‘ওয়েস্টার্ন থিয়েটার’-এ যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে নিজের বাহিনীর মহড়ার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল। নিজের সামরিক প্রযুক্তির ফাঁকফোকর ঢাকতে, কোথায় খামতি রয়েছে, তা চিহ্নিত করাটাই চিনের লক্ষ্য ছিল, এমনও হতে পারে।
এই প্রথম সামরিক বাহিনীর কোনও শীর্ষকর্তা লাদাখে চিনের গতিবিধির সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণ করলেন। বায়ুসেনা-প্রধানের বক্তব্য, ‘‘শুরুতে লক্ষ্য যা-ই হোক না কেন, এই সমস্ত সম্ভাব্য ঘটনাই বাস্তবে ঘটেছে।’’ তাঁর বক্তব্য, হতে পারে, এটা পুরোপুরি চিনের সামরিক বাহিনীর নিজস্ব ‘মিসঅ্যাডভেঞ্চার’ ছিল। যা তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। লাদাখে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে থেকেই কোভিডের জন্য চিনের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। হতে পারে, চিনের প্রথমে মুখ পোড়ার পরে নিজেরাই আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তান-চিন সম্পর্ক নিয়ে বায়ুসেনা-প্রধান বলেন, চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডরের জন্য ঋণের ফাঁদে পড়ে পাকিস্তান ক্রমশ চিনের হাতের ঘুঁটি হয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে পাকিস্তানের চিন-নির্ভরতা আরও বাড়বে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার পরে চিন আফগানিস্তান তথা মধ্য এশিয়ায় সরাসরি বা পাকিস্তানের মাধ্যমে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। বহু দিন ধরেই তাদের সে দিকে নজর রয়েছে। এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, “ভারতের নিরাপত্তার দিক থেকে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, চিনের গেম প্ল্যান বোঝা।” তাঁর মতে, চিনের আকাঙ্ক্ষা মূলত আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ছড়ি ঘোরানো। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে তারা এশিয়া মহাদেশে ছড়ি ঘোরাতে চায়। কিন্তু ভারত-চিন সংঘাত গুরুতর আকার নিলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তা চিনের জন্য ভাল হবে না বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন ভাদুরিয়া।