আগামী জুন মাসে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সম্মেলনে যোগ দিতে চিন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে ডোকলাম-পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কিছুটা ইতিবাচক চেহারা দেওয়াটা এই মুহূর্তে সাউথ ব্লকের অগ্রাধিকার। তবে কেন্দ্রের কৌশল, সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি আরও প্রসারিত করার পাশাপাশি মতানৈক্যের জায়গাগুলিতে সুর যথেষ্ট চড়িয়েই রাখা হবে।
আজ যেমন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ‘‘ডোকলামে যে কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি ও সতর্ক। বাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজও লাগাতার চলছে। আমরা আমাদের মাটির অখণ্ডতা রক্ষা করব।’’ গত কাল হংকংয়ের একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও একই সুরে কথা বলেছেন চিনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বেওয়ালা। চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা লঙ্ঘন করলে ফের ডোকলামের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বাম্বেওয়ালা একই সঙ্গে জানিয়েছেন, চিনের সঙ্গে মতৈক্যের ক্ষেত্রগুলিকে আরও গভীর করতে চাইছে ভারত। সম্পর্কের তার নতুন করে বাঁধার কথাও বলা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতের কথায়, ‘‘এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। তার আগে আমরা নিজেদের মধ্যেও বেশ কিছু বৈঠক করব।’’
সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং বিদেশ মন্ত্রকের একটি বড় অংশ ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছেন, চিনের সঙ্গে মৈত্রী বজায় রেখে এগোনোটাই এই মুহূর্তে একমাত্র পন্থা।
ডোকলাম থেকে যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে, এমনটাও মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। এটা ঠিকই যে, পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী (এনএসজি)-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে বাগড়া দেওয়া থেকে জইশ নেতা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাঁচানোর চেষ্টা— বেজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা যথেষ্টই বড়।
মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করে আমরা অবশ্যই গলাগলি করব না। কিন্তু দেখতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে মতবিরোধের জন্য যেন সামগ্রিক আদানপ্রদান থমকে না যায়।’’
গত মাসে নতুন বিদেশসচিব বিজয় গোখলে বেজিং গিয়েছেন। এপ্রিলে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের চিন যাওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই দলাই লামার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে বেজিংকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। প্রসন্ন চিন বলতে বাধ্য হয়েছে, ড্রাগন এবং হাতির একই সঙ্গে নৃত্য করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে!
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ, নেপাল-সহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সামলাতে আপাতত হিমশিম নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে চিনের সঙ্গে ইতিবাচক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টাই জোরদার করা হবে আগামী দু’মাসে।