যুদ্ধবিমান রাফাল। — ফাইল চিত্র।
ফ্রান্সের সঙ্গে ২৬টি ‘রাফাল মেরিন’ (রাফাল-এম) যুদ্ধবিমানের চুক্তি নিয়ে আলোচনা অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে চুক্তি। সোমবার এমনটাই জানালেন ভারতের নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠি।
সোমবার বার্ষিক নৌসেনা দিবস উপলক্ষে একটি সাংবাদিক বৈঠকে দীনেশ বলেন, ‘‘রাফাল-এম সংক্রান্ত আলোচনা এখন অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে। এখন শুধু এটিকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। বেশ কয়েক দফা আলোচনার পর যুদ্ধবিমানগুলির চূড়ান্ত দামও কমানো গিয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই এ নিয়ে রফা হতে পারে।’’ যে হেতু এটি এক দেশের সরকারের সঙ্গে আর একটি দেশের সরকারের চুক্তি, তাই এটি চূড়ান্ত হতে বেশি সময় লাগবে না, এমনটাই দাবি দীনেশের।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতে আনার চুক্তি হয়। সেই মতো রাফালের প্রথম ব্যাচটি এসে পৌঁছয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। এ বার বায়ুসেনার পাশাপাশি নৌসেনার হাতেও ২৬টি যুদ্ধবিমান এলে জলপথ থেকেই আক্রমণ শানাতে পারবে ভারত। ক্যাটোবার প্রযুক্তি থাকায় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ থেকেই উড়ান কিংবা অবতরণ করতে পারবে রাফাল-এম। তবে এ বারের রাফালগুলির কাঠামোয় বেশ কিছু অদলবদলের অনুরোধ করেছে ভারতীয় নৌসেনা। জেট-গুলিতে আরও উৎকৃষ্ট রাডার লাগানোর কথা বলা হয়েছে। তবে এই রাডার লাগাতে আরও আট বছর সময় লেগে যেতে পারে। পাশাপাশি, বিমানগুলিতে দেশীয় কিছু প্রযুক্তি সংযোজনের অনুরোধ করেছে ভারত। এই অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ‘রুদ্রম’ এবং ‘অস্ত্র’, যেগুলি যথাক্রমে অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইল এবং বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ মিসাইল। এই অস্ত্রগুলি রাফাল-এম জেটে যুক্ত হলে তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নৌসেনার শক্তি বাড়াতে ইতিমধ্যেই দেশীয় ভাবে ৬২টি যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজ তৈরি করছে ভারত। আগামী বছরের মধ্যেই নয়া একটি যুদ্ধজাহাজও নৌসেনায় সংযুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত মাসেই ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর সঙ্গে বৈঠকও করেন অজিত। এ ছা়ড়াও ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর সঙ্গেও বৈঠক হয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার। সেখানেই ভারতীয় নৌসেনার জন্য ২৬টি রাফাল মেরিন যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি রাফাল-এমের নির্মাণকারী সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন যুদ্ধবিমানগুলির চূড়ান্ত দামের তালিকা জমা করেছে। বিমানগুলির দামেও কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। রাফাল-এম যুদ্ধবিমান ছাড়াও স্করপিয়ান শ্রেণির ডুবোজাহাজ এবং মহাকাশ গবেষণা ও সুরক্ষা নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রাফাল-এম চলে এলে তা বিমানবাহী রণতরী ‘আইএনএস বিক্রান্ত’-এ মোতায়েন করা হতে পারে। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ওই যুদ্ধজাহাজে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে ভারতীয় নৌসেনা। রাফাল হাতে পেলে পুরনো দিনের এই যুদ্ধবিমানগুলিকে অবসরে পাঠাবে নয়াদিল্লি।