ছবি: পিটিআই।
সংবাদমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের স্বাধীনতার বিশ্ব-তালিকায় ভারত আরও দু’ধাপ নেমে গেল নরেন্দ্র মোদীর জমানায়। প্যারিস-ভিত্তিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)’ ১৮০টি দেশের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যে তালিকা এ বছর প্রকাশ করেছে, ভারত তাতে ১৪২ নম্বরে। ২০১৯-এর কাশ্মীর-পরিস্থিতির কারণেই যে ভারতের এই পতন, সেটা বেশ কঠোর ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএফের খতিয়ানে। গত বছরের কাশ্মীর-চিত্রটি তাদের ভাষায়, “বিশাল এলাকা জুড়ে মুক্ত কারাগার। সেখানে কী ঘটে চলেছে, সাংবাদিকদের পক্ষে তা জানানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
ভারত ২০১৯-এও আরএসএফের তালিকায় দুই ধাপ নেমেছিল। ২০১৮-তে শুজাত বুখারি-সহ মোট ছ’জন সাংবাদিক খুন হন। ২০১৯-এ অবশ্য কেউ খুন হননি। কিন্তু মোদী সরকার গত অগস্টে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সময় থেকেই জম্মু-কাশ্মীরকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। মূলত সেই পর্বের কথাই আছে রিপোর্টে। তাতে লেখা, “সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন নিরন্তর ঘটছে। সাংবাদিকদের উপরে রাজনৈতিক কর্মীদের হামলা, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্তা বা দুষ্কৃতীদের প্ররোচনায় বদলা নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।” হিন্দুত্ববাদীদের চাপের কথাও রয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, “হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে চলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। জাতীয় স্তরের যে কোনও বিতর্ককেই তারা রাষ্ট্রবিরোধী তকমা দিচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের অপছন্দের কিছু বলা বা লেখার সাহস করেন যাঁরা, সুপরিকল্পিত ভাবে সেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে। তিনি মহিলা হলে তো আক্রমণের হুল তীব্র হচ্ছে আরও।”
গত বছরের পরিস্থিতির নিরিখে ২০২০-র এপ্রিলে যখন এই রিপোর্ট প্রকাশিত হল, তার দু’দিন আগেই কাশ্মীরের দুই সাংবাদিককে নিশানা করেছে পুলিশ। চিত্রসাংবাদিক মসরত জ়াহরা তাঁদের এক জন। গত ১৮ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে এফআইআর করা হয়েছে, যে আইনে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। জ়াহরার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শান্তিভঙ্গে প্ররোচনা দিতে সামাজিক মাধ্যমে জাতীয়তা-বিরোধী পোস্ট দিচ্ছেন। জ়াহরার বক্তব্য, তিনি তাঁর পেশার দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র। এ দিন আবার সাংবাদিক ও লেখক গৌহর গিলানির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গুণমান নিয়ে প্রশ্ন, চিনা কিটে আপাতত করোনা-পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশ
আরও পড়ুন: ছেলে কাঁধে ৩০০ মাইল হেঁটে গ্রামে ফিরেও ‘ঘর’ পেলেন না দয়ারাম
আরএসএফের তালিকায় ভারতের পরের তিনটি দেশ হল মেক্সিকো, কোম্বোডিয়া ও পাকিস্তান। নোভেল করোনা-সংক্রমণের তথ্য গোপন করা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ এখন যে দেশটির বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে, সেই চিন রয়েছে ১৭৭ নম্বরে। কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া তালিকার শেষ প্রান্তে, ১৮০-তে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে নরওয়ে এই নিয়ে চতুর্থ বার রয়েছে তালিকার শীর্ষে। তার পরের দু’টি দেশ হল ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক। জার্মানি ১১, ফ্রান্স ৩৪, ব্রিটেন ৩৫ ও আমেরিকা ৪৫ নম্বরে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)