গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রায় তিন মাস পর দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের নীচে নামল। তার জেরে কমল দৈনিক সংক্রমণের হারও। কিছুটা হলেও লাগাম টানা গিয়েছে মৃত্যুতেও। উৎসবের মরসুমে দেশের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতিতে তাই খানিকটা হলেও আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭৯০ জন। ২৯ জুলাইয়ের পর এই প্রথম দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের নীচে রইল।
ওই একই সময়কালে আমেরিকায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৫৬১। ব্রাজিলে সংখ্যাটা ছিল ৬ হাজার ৮৩৬। দেশে সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৭৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৩ জন মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আমেরিকা ও ব্রাজিলে এই সংখ্যাটা যথাক্রমে ৮২ লক্ষ ১২ হাজার ৯৮১ এবং ৫২ লক্ষ ৫০ হাজার ৭২৭।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ, কমছে সুস্থতার হার, রাজ্যে চলতি প্রবণতায় বাড়ছে উদ্বেগ
১৮ অক্টোবরকে বাদ দিলে গত ৪ অক্টোবর থেকে দেশে দৈনিক মৃত্যু হাজারের নীচেই রয়েছে। এ দিনও সেই ধারা অব্যাহত। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৮৭ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল এই সংখ্যাটা ছিল ৫৭৯। এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপে ১ লক্ষ ১৫ হাজার ১৯৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে দেশে।
তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু চলতে থাকলেও প্রচুর মানুষ রোগমুক্ত হয়ে বাড়িও ফিরছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার প্রকোপ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৯ হাজার ৭২০ জন। মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩২৮ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর ফলে দেশে সুস্থতার হার বেড়ে ৮৮.৬৩ শতাংশ হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৩৮।
প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে এবং তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। বিক্ষিপ্ত কিছু দিন বাদ দিলে সেপ্টেম্বর থেকে দেশে সংক্রমণের হার ৬-৮ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। এ দিন তা আরও নেমে ৪.৫৩ শতাংশ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ লক্ষ ৩২ হাজার ৭৯৫ জনের।
সংক্রমণ এবং মৃত্যু, দুইয়ের নিরিখেই এই মুহূর্তে দেশে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এখনও পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ১ হাজার ৩৬৫ জন সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ২৪০ জনের। একই সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৭৯ জন।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫০। তবে তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর চেয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা কম। অন্ধ্রপ্রদেশে করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫৩ জনের প্রাণ গিয়েছে। কর্নাটকে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৬০৪। তামিলনাড়ুতে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৯৩৬ জন এখনও পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন। কর্নাটকে করোনার প্রকোপে প্রাণ গিয়েছে ১০ হাজার ৫৪২ জনের। তামিলনাড়ুতে সংখ্যাটা ১০ হাজার ৬৯১।
তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৬৫। মারা গিয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৫ জন রোগী। তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা কেরলে এখনও পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৮১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৮২ জনের।
রাজধানী দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৭১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। প্রাণহানি ঘটেছে ৬ হাজার ৪০ জনের। তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে দিল্লি। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে অষ্টম স্থানে। ৩ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বাংলায়। প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ১১৯ জন। ওডিশা ও তেলঙ্গানা এই তালিকায় যথাক্রমে নবম ও দশম স্থানে রয়েছে। ওডিশায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৪৬। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৫২ জনের। তেলঙ্গানায় সবমিলিয়ে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৪৫ জন। প্রাণহানি ঘটেছে ১ হাজার ২৮২ জনের।
আর যেখানে মৃত্যুসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে, সেগুলি হল— রাজস্থান (১৭৬০), ছত্তীসগঢ় (১৫৩৪), মধ্যপ্রদেশ (২৭৮৬), গুজরাত (৩৬৪৩), হরিয়ানা (১৬৪৮), পঞ্জাব (৪০২৯) এবং জম্মু ও কাশ্মীর (১৩৮৮)।
আরও পড়ুন: ‘ভিড় সামলে দেব, কিন্তু অঞ্জলি!’
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)