জিতেন্দ্র সিংহ।
ডিজিটাল বিভাজনের বিতর্ক জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও সরকারি নিয়োগে বড় মাপের সংস্কারের পথে হাঁটল কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আজ জাতীয় নিয়োগ সংস্থা (এনআরএ) তৈরিতে সায় দিল। আগামী দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, রেল ও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নন-গেজেটেড’ পদে নিয়োগের জন্য একটিই প্রাথমিক পরীক্ষা (কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট বা কেট)-র আয়োজন করবে তারা। এখন ওই তিন ক্ষেত্রে যা করে যথাক্রমে ইনস্টিটিউট অব ব্যাঙ্কিং পার্সোনেল সিলেকশন, রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ও স্টাফ সিলেকশন কমিশন।
সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ অবশ্য বলেছেন, এনআরএ-র কাজ হবে শুধু প্রাথমিক বাছাইয়ের পরীক্ষা নেওয়া। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত বাছাইয়ের দায়িত্ব আগে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলির। বি এবং সি গ্রুপের যে সমস্ত নিয়োগে প্রযুক্তির মতো নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতার প্রয়োজন, সেগুলিও আগাগোড়া থাকবে নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলির হাতে।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে বিপুল আধাসেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ
কর্মী ও প্রশিক্ষণ সচিব সি চন্দ্রমৌলির দাবি, এখন প্রতিটি নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদনের পরে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করতে হয় প্রাথমিক স্তর থেকে। এতে সমস্যা বিস্তর। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা ফি। আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র। আলাদা পাঠ্যক্রম। একই দিনে একাধিক পরীক্ষা হলে, একটিকেই বেছে নিতে বাধ্য হওয়া। নতুন ব্যবস্থায় এই সমস্ত হয়রানি থেকে মুক্তি মিলবে।
সচিবের মতে, এতে পরীক্ষা আয়োজনেও সুবিধা হবে যথেষ্ট। কারণ, বার বার পুলিশ, পরীক্ষা কেন্দ্র, পরীক্ষক জোগাড়ের ঝক্কি কমবে। সে বাবদ খরচ কমার পাশাপাশি কমবে নিয়োগের জন্য যে দীর্ঘ সময় লাগে সেটাও। তিনি জানান, ফি বছর বিভিন্ন প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষায় বসেন ২.৫ থেকে ৩ কোটি চাকরিপ্রার্থী। নতুন ব্যবস্থায় প্রতি জেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র থাকায়, তাঁদের যেমন দূরে যেতে হবে না, তেমনই প্রাথমিক পরীক্ষার নম্বর হাতে নিয়েই বহু চাকরির পরের ধাপের পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইট, “…এই সাধারণ বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে বহু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা মুছে যাবে। তাতে সময় বাঁচবে। কমবে খরচও। অনেক বেশি স্বচ্ছ হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া।”
চন্দ্রমৌলি জানিয়েছেন, তিন বছরের জন্য এনআরএ-কে দেওয়া হবে ১,৫১৭.৫৭ কোটি টাকা। যা দিয়ে ওই সংস্থা তৈরির পাশাপাশি দেশের পিছিয়ে থাকা ১১৭টি জেলায় পরীক্ষা-পরিকাঠামো গড়া হবে।
কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, অনলাইন পরীক্ষার পরিকাঠামো ক’টি জেলায় আছে? প্রত্যন্ত প্রান্ত, গ্রাম, এমনকি ছোট-বড় শহরের অনেকেও যে এখনও কম্পিউটারে পরীক্ষায় সড়গড় নন, তা কি সরকারের অজানা?
করোনা-কালে ইন্টারনেটে ক্লাস করতে গিয়েই প্রবল সমস্যার মুখে বহু পড়ুয়া। কারও নেট সংযোগ নেই। কারও বাড়িতে লেগেই রয়েছে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা। কেউ স্মার্ট ফোন কিনতে না-পেরে বেছে নিয়েছে আত্মহত্যার পথ। এই রূঢ় বাস্তবের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেন্দ্র সরকারি চাকরির পরীক্ষা শুধু নেট-নির্ভর করার কথা বলছে কী ভাবে? কেন্দ্রের যদিও যুক্তি, পরিকাঠামো গড়ায় খামতি থাকবে না। গ্রামীণ এলাকায় চাকরিপ্রার্থীদের সড়গড় করতে বন্দোবস্ত হবে ‘মক টেস্টেরও’।
কিন্তু অনেকে আবার এর মধ্যে গন্ধ পাচ্ছেন কর্পোরেট আঁতাঁতের। অভিযোগ, এ দেশে বিপুল বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে গুগল, অ্যামাজ়নের মতো সংস্থা। নেট-নির্ভর পড়াশোনা, পরীক্ষাকেও বিপুল বাজার হিসেবে দেখছে তারা। বিরোধীদের প্রশ্ন, সেই বাজার তাদের হাতে তুলে দিতেই কি এত তাড়া কেন্দ্রের?
এক ঝলকে
• পরীক্ষার নাম: কমন এলিজিবিলিটি টেস্ট (সিইটি বা কেট)।
• আয়োজক সংস্থা: ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি (এনআরএ)।
• সাধারণ প্রাথমিক (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা।
• রেল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সরকারের বি এবং সি গ্রুপের সাধারণ কর্মী নিয়োগের প্রথম ছাঁকনি।
• দশম, দ্বাদশ এবং স্নাতক উত্তীর্ণদের জন্য তিনটি আলাদা পরীক্ষা।
• নম্বর বৈধ ৩ বছরের জন্য।
• নির্দিষ্ট বয়সসীমা পর্যন্ত দেওয়া যাবে যত বার খুশি। নেওয়া হবে সর্বোচ্চ নম্বরই।
• প্রত্যেক চাকরির জন্য আলাদা প্রাথমিক পরীক্ষা না-দিয়ে ওই নম্বরের সূত্রেই আবেদন নিয়োগের পরবর্তী ধাপে।
• পরীক্ষা অনলাইনে। শুরুতে ইংরেজি, হিন্দি-সহ ১২টি ভাষায়। পরে তা বাড়তে পারে।
• প্রত্যেক জেলায় এক বা একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্র।
• পরে অধিকাংশ সাধারণ কেন্দ্রীয় নিয়োগেই এই নম্বর ব্যবহারের পরিকল্পনা। চাইলে, সুবিধা নিতে পারে সমস্ত রাজ্যও।