Global Hunger Index 2020

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪ নম্বরে ভারত

আইএমএফের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কোচনের হার (১০.৩%) ছাপিয়ে যেতে পারে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

দরিদ্রের মুখে ভাত নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন কল্যাণকামী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজর এড়িয়ে যায় বলে গতকালই আক্ষেপ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন অস্বস্তি! বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪-এ ভারত।

Advertisement

শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশের মতো পড়শি মুলুক তো বটেই, এই ক্রম-তালিকায় ভারতের আগে নাম রয়েছে পাকিস্তানেরও (সবিস্তার পাশের সারণিতে)। ভারতের পিছনে রোয়ান্ডা, নাইজিরিয়ার মতো হাতে গোনা কয়েকটি দেশ। এই তথ্য তুলে ধরে মোদী সরকারকে ফের তুলোধোনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। টুইটে তাঁর দাবি, সরকার গুটিকয় বিশেষ বন্ধুর পকেট ভরতে ব্যস্ত বলেই অভুক্ত থাকতে হচ্ছে দরিদ্রদের। ইঙ্গিত, করোনা-কালেও মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স, গৌতম আদানির আদানি গোষ্ঠীর মুনাফা ফুলেফেঁপে ওঠার দিকে।

এই পরিসংখ্যানকে লজ্জা হিসেবে চিহ্নিত করে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, “সরকারি গুদামে যে ১০ হাজার কোটি টন খাদ্যশস্য পচছে, অভুক্তদের মধ্যে তা বরং নিখরচায় বিলি করার বন্দোবস্ত করুন মোদী।” বিজেপি সূত্রে পাল্টা যুক্তি, ইউপিএ জমানাতেও এই ক্রম-তালিকায় ভারতের স্থান ছিল একেবারে পিছনের সারিতে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নবরাত্রির শুভেচ্ছায় নারীকে শ্রদ্ধা রাহুলের

আরও পড়ুন: ভোটের মতো গুরুত্বে টিকা বিলি: মোদী

একাধিক আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ও অ-সরকারি সংস্থার উদ্যোগে প্রতি বছর অক্টোবরে প্রকাশিত হয় এই সূচক। ক্রম-তালিকা তৈরি হয় অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম ওজন ও উচ্চতা সম্পন্নদের অনুপাত, পাঁচ বছরের নীচে শিশুমৃত্যুর হার ইত্যাদির ভিত্তিতে। অর্থাৎ, পাতে কত জন খাবার পাচ্ছেন, শুধু তা এখানে বিবেচ্য নয়। সেই খাবারে পুষ্টির মাত্রা কেমন, তা শিশুদের সঠিক বৃদ্ধির পক্ষে জুতসই কি না, সেই সমস্ত কিছুও দেখা হয় এখানে। এই নিরিখে গত বছর ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১০২ নম্বরে। এ বারে মোট ১৩২টি দেশ থেকে তথ্য সংগৃহীত হলেও, নম্বর বিচারের জন্য তা পর্যাপ্ত ছিল ১০৭টির। তাদের মধ্যে ভারত ৯৪ নম্বরে। তথ্য বলছে, দেশের ১৪% মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভোগেন। পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারের অভাবে ঠিকঠাক বৃদ্ধি আটকে যাচ্ছে ৩৭ শতাংশেরও বেশি শিশুর।

...দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে মরে সে নীরবে। — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অন্নহীন…

• বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪ নম্বরে ভারত।

• তুলনায় এগিয়ে শ্রীলঙ্কা (৬৪), নেপাল (৭৩), বাংলাদেশ (৭৫), মায়ানমার (৭৮), এমনকি পাকিস্তানও (৮৮)।

• পিছনে শুধু রোয়ান্ডা (৯৭), নাইজেরিয়া (৯৮), আফগানিস্তান (৯৯), চাদের (১০৭) মতো গুটিকয় দেশ।

• প্রত্যেক দেশকে নম্বর দেওয়া হয় অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম ওজন ও উচ্চতা সম্পন্নদের অনুপাত, পাঁচ বছরের নীচে শিশুমৃত্যুর হার ইত্যাদির ভিত্তিতে। ক্রম তালিকা সেই অনুযায়ী।

• ইউপিএ হোক বা এনডিএ সরকার— তালিকায় ভারতের স্থান বরাবর একেবারে পিছনের দিকে।

আইএমএফের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কোচনের হার (১০.৩%) ছাপিয়ে যেতে পারে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে। মাথাপিছু জিডিপির নিরিখে এ দেশকে টপকে যাওয়ার মুখে বাংলাদেশ।গত কয়েক দিন ধরে এই সমস্ত তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমালোচনায় কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন রাহুল। এ দিন ফের ক্ষুধা সূচকের এই অস্ত্রে মোদীকে বিঁধেছে বিরোধী শিবির। তাদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যে বার বার বলেন, এক জনকেও তিনি অভুক্ত থাকতে দেন না, পরিসংখ্যানে তার প্রতিফলন কোথায়? কোথায় বা দরিদ্রদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন?

তেমনই শাসক শিবিরের পাল্টা দাবি, প্রথমত, তালিকায় মোট দেশের সংখ্যা প্রতি বার সমান না-হওয়ার কারণে এক বছরের অবস্থানের সঙ্গে পরের বছরের তুলনা করা শক্ত। দ্বিতীয়ত, ২০১৬ সালের আগে যে সমস্ত দেশ পাঁচের কম নম্বর পেত, ক্রম-তালিকায় রাখাই হত না তাদের। পরে সেই পদ্ধতি পাল্টেছে। এ ছাড়া, ২০০৬ এবং ২০১২ সালে ভারতের প্রাপ্ত নম্বর যেখানে যথাক্রমে ৩৭.৫ ও ২৯.৩ ছিল, ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে ২৭.২। উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর যত বেশি, পরিস্থিতি তত উদ্বেগজনক। সেই বছর তালিকায় অবস্থানও তত পিছনে।সূচকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দু’দশকে ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিরসনে ভারত খানিকটা এগোলেও, তার গতি সব সময় সমান নয়। এই উদ্যোগ থেকে এখনও বাদ পড়ে আছেন অনেকে। ‘সব কা বিকাশের’ স্লোগান তোলা সরকারের পক্ষে যা নিঃসন্দেহে অস্বস্তির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement