প্রতিবাদ মঙ্গলবার কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বিল নিয়ে আপাতত ব্যাকফুটে কেন্দ্র।
শুক্রবার শেষবেলায় লোকসভায় বিলটি পেশ করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা। আজ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিলের নানা ধারা নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি এনডিএ-র অভ্যন্তরেও বিতর্ক শুরু হওয়ায় বিলটিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল সরকার। ফলে চলতি অধিবেশনে বিলটি আসার সম্ভাবনা আর রইল না। তবে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন বাজেট অধিবেশনের আগেই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মেডিক্যাল শিক্ষায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোখা এবং সংস্কারমুখী পাঠ্যসূচি চালু করার লক্ষ্যে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার জায়গায় জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। এই কমিশন গঠন সংক্রান্ত বিলের প্রতিবাদেই আজ ১২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। আইএমএ-র কেন্দ্রীয় শাখা মূলত বিজেপি-প্রভাবিত বলে পরিচিত। সে ক্ষেত্রে প্রতিবাদে তাদের সামিল হওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন: কোরেগাঁও যুদ্ধ দলিতের কাছে গর্বের বিষয় হয়ে উঠল কী ভাবে
বিলের বিরুদ্ধে আইএমএ রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেনের দাবি, কমিশন চালু হলে মেডিক্যাল শিক্ষার প্রায় গোটাটাই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে। উপদেষ্টা পর্ষদ ছাড়া রাজ্যের প্রতিনিধি থাকছেই না। যা নিয়ে সরব কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলিও। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, ‘‘এই ‘ড্র্যাকোনিয়ন’ আইন কার্যকরী হলে মেডিক্যাল শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আমলাতন্ত্র ও অ-চিকিৎসক ব্যক্তিরা।’’ নতুন বিল অনুযায়ী চিন-বাংলাদেশের মতো একাধিক দেশ থেকে পাশ করে এসে ভারতে প্র্যাকটিস করার জন্য আলাদা করে পরীক্ষা দিতে হবে না। তাতেও অশনি সঙ্কেত দেখছে আইএমএ।
বিতর্কিত
• ব্রিজ কোর্স করলেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন আর্য়ুবেদ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকেরা।
• বেসরকারি কলেজগুলি ইচ্ছেমত আসন বাড়াতে পারবে। নতুন পাঠ্যক্রমও শুরু করতে পারবে।
• যে কেউ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ খুলতে পারবেন। তিন বছরের শেষে হবে সমীক্ষা।
• চিকিৎসকদের পাঠ্যক্রমের শেষে চিকিৎসা শুরু করার আগে ফের পরীক্ষা দিতে হবে।
• মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ৬০ শতাংশ আসনের ফি ঠিক করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
• সমস্ত ক্ষমতা কমিশনের হাতে। আর কমিশনের সমস্ত ক্ষমতা আমলাতান্ত্রিক।
বিরোধীদের অভিযোগ, পুঁজিপতিদের স্বার্থে বেসরকারি হাসপাতালে ম্যানেজমেন্ট কোটা ১৫% থেকে বাড়িয়ে ৬০% করার কথা বলা হয়েছে। বাড়বে মেডিক্যাল শিক্ষার খরচও। কারণ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ৬০% আসনে ফি ঠিক করবে প্রতিষ্ঠানই। ফলে গরিব, মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য ডাক্তারি পড়া সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। অথচ চিকিৎসক-সঙ্কট ঢাকতে নতুন বিলে বলা আছে, ব্রিজ কোর্স করে আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকেরা অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লিখতে পারবেন। বিরোধীদের আশঙ্কা, এই চিকিৎসকদের কাজে লাগানো হবে গ্রামে। ফলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়তে পারে।