India Lockdown

মালিকদের চাপেই কি শ্রমিক ফেরাতে অনীহা

যে সরকারি কর্মীরা শ্রমিকদের দক্ষতার রিপোর্ট তৈরির জন্য ত্রাণশিবিরে গিয়েছিলেন, বাড়ি ফিরতে না-দিলে কাজে যোগ দিতে বেঁকে বসার কথা শুনে এসেছিলেন তাঁরা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী ও ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০৪:২৯
Share:

ছবি এএফপি।

কারখানা খুললে মেশিন চালাবে কে? শিল্পমহলের একাংশের এই প্রশ্ন আর চাপের মুখেই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা রুখতে মরিয়া ছিল কেন্দ্র। রেলের টিকিট ঘিরে তুমুল তর্কের মধ্যে সোমবার সরকারের দিকে অভিযোগের তির শ্রমিক সংগঠনগুলির। এমনকি তাদের দাবি, আগামী দিনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম ভরসাটুকু কেড়ে নিতে যে বিল এখন সংসদে, ‘করোনার সুযোগে’ তা প্রয়োগের প্রস্তুতিও সেরে রাখল কেন্দ্র! সঙ্ঘের কর্মী সংগঠন বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, অনিচ্ছুক কর্মীর পক্ষে কাজে মন বসানো শক্ত। তাই কিছু দিন কাজ কম থাকবে দেখেই তাঁদের বাড়ি ঘুরে আসার রাস্তা খুলে দেওয়া হল।

Advertisement

৩ মে জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়, লকডাউনের ঠিক আগে যাঁরা ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কিংবা কাজের জায়গা থেকে বাড়ি গিয়ে আটকে পড়েছেন, তাঁদেরই ফেরানোর তালিকায় রাখুক সংশ্লিষ্ট রাজ্য। ট্রেড ইউনিয়ন এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউরের প্রশ্ন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের এখন বাড়ি ফেরাতে চায় না সরকার?” অভিযোগ, শিল্পমহলের একাংশের চাপেই শ্রমিকদের আটকাতে চেয়েছিল কেন্দ্র। যাতে লকডাউনের পরে ঝাঁপ উঠলে নির্মাণ শিল্প, কল-কারখানায় কর্মীর টান না-পড়ে। কিন্তু এক মাসেরও বেশি ঠিক মতো খাবার, জল, ওষুধ, মাথা গোঁজার জায়গা না-পেয়ে ফুঁসছিলেন কর্মীরা। যার প্রতিফলন ঘটছিল সুরত, হায়দরাবাদের বিক্ষোভে। যে সরকারি কর্মীরা শ্রমিকদের দক্ষতার রিপোর্ট তৈরির জন্য ত্রাণশিবিরে গিয়েছিলেন, বাড়ি ফিরতে না-দিলে কাজে যোগ দিতে বেঁকে বসার কথা শুনে এসেছিলেন তাঁরা। তাই বাধ্য হয়েই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত।

ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের প্রশ্ন, “সব স্তরে পরিকল্পনার অভাব আর প্রশাসনিক ঔদাসীন্য তো আছেই। কিন্তু সুরতে যে ভাবে শুধু হিরে এবং বস্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ মাথায় রেখে ভিন্ রাজ্যের কর্মীদের বাড়ি ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না, তা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?”

Advertisement

আরও পড়ুন: কিসে ছাড়? কোথায় ছাড়? বিভ্রান্তি দেশ জুড়ে, দেখে নিন আপনার প্রশ্নের উত্তর

সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের ক্ষোভ, “আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী কর্মীদের ন্যূনতম সুরক্ষাটুকু নিশ্চিত করতে ১৯৭৯ সালের যে আইন চালু ছিল, প্রস্তাবিত কর্মী সুরক্ষা বিধিতে (যা সংসদে পেশ হয়েছে) তা মিশিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল কেন্দ্র। কিন্তু বাস্তবে ওই কর্মীদের পরিচয়পত্র দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁদের কাজ দেওয়া ঠিকাদারদের বাধ্যতামূলক নথিভুক্তি- অধিকাংশ বিষয়ই বাদ গিয়েছে বিধিতে। আইন থাকতে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দুর্দশা দেখার পরেও যদি তা তুলে দেওয়া হয়, সেটা জঘন্য অপরাধ। প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে চিঠি দিয়েছি।” তাঁর কটাক্ষ, করোনা-সঙ্কটের সুযোগে কি ওই আইনের রক্ষাকবচ হারানোর অনুভূতি আগাম দেওয়া হল শ্রমিকদের!

ট্রেড ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, গোড়া থেকেই এই কর্মীদের কথা চিন্তা করেনি সরকার। দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে কেন্দ্র এবং অধিকাংশ রাজ্য। নইলে ফেরানোই যদি হবে, তা হলে এত দিন তাঁদের আধপেটা খেয়ে ত্রাণশিবিরে থাকতে বাধ্য করা হল কেন? ত্রাণ শিবিরে শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে কত জনের? কর্মীদের আটকে রাখার পরিকল্পনা মাঝপথে চৌপাট হওয়াতেই বিপত্তি বলে তাদের দাবি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement