লকডাউনে সুনসান নয়াদিল্লির রাস্তা। ছবি: রয়টার্স।
প্রথমে ২১ দিন। তার পরে ১৯ দিন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করতেই শুরু হল জল্পনা। অনেকেরই প্রশ্ন, করোনা-সংক্রমণ রুখতে দেশে কেন পাক্কা ৪০ দিন লকডাউনের ঘোষণা করা হল! এর নেপথ্যে কি যোগ-বিয়োগের অঙ্ক রয়েছে, না বৈজ্ঞানিক কোনও যুক্তি?
সরকারি ভাবে এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক শুধু জানিয়েছে, টানা ২৮ দিন কোনও এলাকা থেকে সংক্রমণের খবর না-এলে বলা যেতে পারে, ওই এলাকায় সংক্রমণের শৃঙ্খল (চেন) ভেঙে গিয়েছে। আজ, প্রথম দফার লকডাউনের একুশতম দিনে সব চেয়ে বেশি নতুন সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, তখন থেকে গত চব্বিশ ঘণ্টায় গোটা দেশে নতুন ১,০৩৬টি সংক্রমণের খবর এসেছে। মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। রাতে দেশে মোট সংক্রমিত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০,৮১৫ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ৩৫৩। সুস্থ হয়েছেন ১,১৮৯ জন।
গত কালই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আজ সকালে বক্তৃতা দেবেন তিনি। কৌতূহল ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত শনিবারের ভিডিয়ো বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কেন্দ্র কি তা মেনে নেবে? আজ মোদী সেই দাবি তো মানলেনই, উপরন্তু লকডাউনের মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত করে দিলেন। ৪০ দিন নিয়ে চর্চার সূত্রপাত তখন থেকেই।
আরও পড়ুন: ‘খেতে পাচ্ছি না, আরও ১৯ দিন কী ভাবে কাটাব’
আরও পড়ুন: কিছু ছাড় মিললেও, ৩ মে পর্যন্ত ঘরেই বন্দি গোটা দেশ
আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ফি-দিনের সাংবাদিক বৈঠকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল সরাসরি কোনও জবাব দেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা। কোনও এলাকায় সর্বশেষ সংক্রমণের পর থেকে ২৮ দিন যদি নতুন সংক্রমণের খবর না-আসে, তা হলেই বলা যাবে, ওই এলাকায় সংক্রমণের শৃঙ্খল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ এলাকাটি সংক্রমণ-মুক্ত।’’
৪০ দিন লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া ভাবে কেন্দ্রীয় কর্তারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু ১ মে শুক্রবার পড়েছে। সে দিন অনেক রাজ্যেই ছুটি থাকে। পরের দু’দিন শনি ও রবিবার। সেই কারণে
একেবারে রবিবার, ৩ মে পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। যত বেশি দিন লোকে ঘরে থাকবে, সংক্রমণও তত কম
ছড়ানোর আশঙ্কা।
শুরু থেকেই বিরোধীরা অভিযোগ করে আসছেন, যথেষ্ট পরীক্ষার অভাবে ভারতে সংক্রমণের আসল ছবিটা পাওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষা কেন কম হচ্ছে, সেই প্রশ্নের জবাবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের পদস্থ কর্তা রমন গঙ্গাখেদকর বলেন, ‘‘উপসর্গ থাকতে হবে। তা থাকলে আমরা কাউকে পরীক্ষার প্রশ্নে ‘না’ বলি না।’’
এ যাবৎ ভারতে ২.৩১ লক্ষ পরীক্ষা হয়েছে। গত কাল পরীক্ষা হয়েছে ২১,৩৬৫ জনের। এই প্রসঙ্গে লব আগরওয়াল জানান, এই মুহূর্তে দেশে যত কিট রয়েছে, তার সদ্ব্যবহারের কথা ভেবেই যাঁদের উপসর্গ রয়েছে তাঁদেরই পরীক্ষা করে দেখার নীতি নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্র। উপসর্গ না-থাকলে পরীক্ষা করে কিট নষ্ট করা যুক্তিযুক্ত নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মন্ত্রকের দাবি, পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য বিদেশ থেকে প্রায় ৩৩ লক্ষ প্রথাগত ও ৩৭ লক্ষ অ্যান্টিবডি কিট আমদানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)