কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।—ছবি পিটিআই।
সাতসকালে সনিয়া গাঁধীর ছোট্ট বিবৃতি মোদী সরকার তথা বিজেপি নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। আজ সকাল ৮টা নাগাদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ঘোষণা করে দিলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার জন্য রেল ভাড়ার খরচ দেবে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলিকে অর্থ জোগাড় করে, ঘরমুখো শ্রমিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের হাতে রেলের ভাড়া তুলে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
ওই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার জন্য রেল মন্ত্রক ট্রেনের বন্দোবস্ত করেছিল ঠিকই। কিন্তু তার খরচ দিতে রেল রাজি হয়নি। যে রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা ট্রেনে উঠছেন, সেই রাজ্য খরচ না-জোগালে শ্রমিকদেরই স্লিপার ক্লাসের ভাড়া গুনতে হচ্ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সনিয়ার এই আচমকা চালে বিজেপি নেতৃত্ব প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে যান। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী নিজেই রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে ফোন করেন। তার পরে তিনি দাবি করেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা বিনা খরচে যাতায়াত করবেন। রেল মন্ত্রক এ বিষয়টি স্পষ্ট করে সরকারি ভাবে বিবৃতি দেবে। সোমবার রাত পর্যন্ত অবশ্য রেল মন্ত্রক কোনও বিবৃতি দেয়নি। শ্রমিকেরা বিনা খরচে যেতে পারবেন, এমন ঘোষণাও হয়নি। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আরও দাবি করেন, “রেলমন্ত্রী যখনই জানতে পারেন, তখনই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না।” প্রশ্ন ওঠে, রেলমন্ত্রী কি জানতেনই না যে, শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য ভাড়া আদায় করা হচ্ছে?
রেল মন্ত্রক ১ মে সমস্ত রেলের সমস্ত জ়োনকে নির্দেশ দিয়েছিল, শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য বিশেষ ট্রেনে মেল এক্সপ্রেস ট্রেনের স্লিপার ক্লাসের ভাড়া ধার্য হবে। তার সঙ্গে সুপারফাস্ট চার্জ ৩০ টাকা ও অতিরিক্ত চার্জ বাবদ ২০ টাকা ধার্য হবে। অর্থাৎ ভাড়া ও অতিরিক্ত ৫০ টাকা। কে এই ভাড়া দেবে? রেল মন্ত্রক ২ মে নির্দেশিকায় জানায়, যেখান থেকে ট্রেন ছাড়ছে, সেই রাজ্য শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে রেলকে মোট যাত্রী সংখ্যা জানাবে। রেল সেই অনুযায়ী টিকিট ছাপিয়ে রাজ্য প্রশাসনের হাতে তুলে দেবে। রাজ্য প্রশাসন যাত্রীদের হাতে টিকিট তুলে দিয়ে ভাড়া গুনে নেবে এবং ভাড়ার টাকা রেলের হাতে তুলে দেবে।
সনিয়া আজ বলেন, “১৯৪৭-এর দেশ বিভাজনের পরে এই প্রথম দেশ এত বড় ট্র্যাজেডির সাক্ষী। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব কী? লাখো শ্রমিক ঘরে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু হাতে টাকা বা নিখরচায় পরিবহণের ব্যবস্থা নেই। বিশেষত বিরক্তিকর হল, কেন্দ্র ও রেল তাদের থেকে ভাড়া আদায় করছে।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভানেত্রীর এই পরিকল্পনার পিছনে রয়েছেন কর্নাটকের রাজ্য সভাপতি ডি কে শিবকুমার। তিনি কর্নাটক সরকারের হাতে শ্রমিকদের বাস ভাড়া বাবদ কংগ্রেসের তরফ থেকে ১ কোটি টাকার চেক তুলে দেন। তার পরেই এই মডেল গোটা দেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মুখ রক্ষায় বিজেপি নেতারা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, রাজ্যগুলি কেন শ্রমিকদের থেকে ভাড়া নিচ্ছে? তারা তো নিজেরাই এই খরচ বহন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বিনা খরচে যেতে পারেন। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার, বিহারের নীতীশ কুমার সরকার শ্রমিকদের থেকে ভাড়া নিচ্ছে না বলে উদাহরণ তুলে ধরেন বিজেপি নেতারা। কংগ্রেসের প্রশ্ন, কর্নাটকের বিজেপি সরকার কেন ভাড়া আদায় করছে? বিজেপি তো সবথেকে ধনী দল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল আজ বলেন, “সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুযায়ী যাঁর যেখানে থাকার কথা, সেখানেই থাকা উচিত। কিন্তু কিছু রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে কিছু স্পেশাল ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। কেন্দ্র বা রেল শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার কথা বলেনি। পুরো পরিবহণের খরচের ৮৫ শতাংশ দিচ্ছে রেল। বাকি টাকা দেওয়ার কথা রাজ্যের। সেই নীতি মেনে রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে রেল মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওই ট্রেনগুলি চালানো হচ্ছে।” সনিয়াকে লক্ষ্য করে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর খোঁচা, “সীমিত যাত্রী নিয়ে ট্রেন না চালালে, এ দেশের অবস্থাও ইটালির মতো হত।”
বিজেপির সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের যুক্তি, “শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার খরচের ৮৫ শতাংশই রেল বহন করছে। কারণ, টিকিটে ৫৭ শতাংশ ভর্তুকি দিতে হয়। তিন ভাগের এক ভাগ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলছে। ফেরার সময় ট্রেন ফাঁকা ফিরবে। তাতে আরও ২৮ শতাংশ খরচ যোগ হয়। বাকি ১৫ শতাংশ ভাড়া রাজ্যগুলিকে দিতে বলা হচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নয়। যে সব রাজ্যে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন, তাদের কি কোনও দায়িত্ব নেই?”
কংগ্রেসের প্রশ্ন, ট্রেন চালানোর খরচ তো রেলেরই। এখানে রেল যথা সম্ভব আয় করে নিচ্ছে। তা সে রাজ্যই দিক, বা শ্রমিকরা। সনিয়ার নির্দেশের পরে আজ রাজস্থান সরকার ঘোষণা করেছে, তারাই শ্রমিকদের ভাড়া দিয়ে দেবে। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রশ্ন, রাজ্যের হাতে অর্থ কম। কেন্দ্র আর্থিক সাহায্য তো করছেই না। উল্টে বোঝা চাপাচ্ছে।
আজ অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন, শ্রমিকদের ফেরানোর খরচ যদি কেন্দ্র না দেয়, তা হলে পিএম-কেয়ারস তহবিলে কিসের জন্য? এই প্রশ্ন উস্কে দিয়েই রাহুল গাঁধী বলেন, “এক দিকে রেল শ্রমিকদের থেকে ভাড়া আদায় করছে, অন্য দিকে পিএম-কেয়ারসে ১৫১ কোটি টাকা চাঁদা দিচ্ছে। এই হেঁয়ালির কে সমাধান করবে!”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)