প্রতীকী ছবি।
আরও দু’সপ্তাহ বাড়তে পারে লকডাউন। সরকারি সূত্রের মতে, যে ভাবে করোনার সংক্রমণ ফি-দিন বাড়ছে, তাতে একেবারে লকডাউন তুলে নেওয়ার পক্ষপাতী নন শীর্ষ কর্তারা। চতুর্থ দফার লকডাউনের শেষ দিনে, অর্থাৎ আগামী রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টি নিয়ে কোনও ঘোষণা করতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
সরকারি ভাবে যদিও শীর্ষ কর্তারা চুপ। আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে কেন্দ্র লকডাউনে কিছু ছাড় দিলেও ইদানীং গোটা দেশে রোজ গড়ে ছ’হাজারের বেশি করোনা রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আজ সেই সংখ্যাটা ৬,৩৮৭। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৭০ জন। সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য আঙুল উঠছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের দিকেও। স্বাস্থ্যকর্তাদের তাই মত, লোকাল ট্রেন বা মেট্রো চালু হলে ঘরে-ঘরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই আপাতত সে সব বন্ধই থাক।
দশটি রাজ্য উদ্বেগে রেখেছে কেন্দ্রকে। মোট সংক্রমণের প্রায় ৯০ শতাংশই হচ্ছে মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ এই রাজ্যগুলিতে। রাজ্যগুলির মধ্যে আবার বড় শহর, যেমন মুম্বই, পুণে, হায়দরাবাদ, কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাইয়ে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। গোটা রাজ্যের ৭০-৮০ শতাংশ সংক্রমণ হচ্ছে বড় শহরে। সূত্রের বক্তব্য, লকডাউন উঠলেও কেন্দ্রের শহরকেন্দ্রিক নজরদারি চলবেই।
আরও পড়ুন: কথা না বলেই ট্রেন, মমতার সুরে প্রতিবাদী কেরলও
কনটেনমেন্ট জ়োনে অবশ্য কোনও ছাড় নেই। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ১ জুন থেকে ধর্মস্থান খুলে দেওয়ার আবেদন করলেও বিশেষজ্ঞেরা এর বিরোধী। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ আরও এক মাস বন্ধ রাখার পক্ষে তাঁরা। শপিং মল, সিনেমা হল, হোটেল-রেস্তরাঁ হয়তো আরও কিছু দিন বন্ধ থাকবে। তবে ওই সিদ্ধান্ত রাজ্যের হাতে ছাড়তে চাইছে কেন্দ্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো বন্ধই। ভবিষ্যতে প্রথমে বড় ক্লাস ও পরে প্রাথমিক স্কুলগুলি খোলার কথা ভাবা হয়েছে।
আজ দেশে সংক্রমণের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়েছে। সরকারের একাংশের মতে, চিনের চাপেই ভারতীয় ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (এইচসিকিউ)-এর প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
আরও পড়ুন: লকডাউন উঠতেই কি সংক্রমণের নয়া ঢেউ?
গত কালই আইসিএমআর জানিয়েছিল, ওই ওষুধ ব্যবহার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ভারতে এইচসিকিউয়ের প্রয়োগ চলবে। আজ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-এর প্রধান শেখর মানডে বলেন, ‘‘আইসিএমআর যখন ওই ওষুধ ব্যবহারে সায় দিয়েছে, তখন ভরসা রাখা উচিত।’’
লকডাউন ব্যর্থ বলে অভিযোগ তোলায় রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে গেল কেন্দ্র। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ করলেন, ‘‘লকডাউনে যদি লাভ না হয়, কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি কেন আগেভাগে লকডাউনের পথে হেঁটেছিল? লকডাউনের জন্যই দেশে সংক্রমণ অনেক কম হয়েছে।’’
রাহুল অবশ্য এ সবে কান না দিয়ে এ দিন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আশিস ঝা ও সুইডিশ অতিমারি-বিশেষজ্ঞ জোহান জিসিকে-র সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেন। আশিসের বক্তব্য, ‘‘লকডাউনে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরির জন্য সময় মেলে। লকডাউন নিজে কোনও সমাধান নয়।’’
জিসিকে দাবি করেন, এমনিতেই এই ভাইরাসে বিশ্বের প্রায় সকলে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু মাত্রা কম বলে অনেকেই টের পাবেন না। কিন্তু ‘কঠোর লকডাউন’ অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে।