বক্তা: সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৩তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। রয়েছেন সুগত বসু। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
জন্মদিনের আসরেও বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায়! বুধবার, সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৩তম জন্মদিনে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর কথার সূত্রে যে বিষাদ চারিয়ে গেল। নেতাজির বাড়ির অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় যিনি বলেন, ‘‘এক স্বপ্নভঙ্গ থেকে আর এক স্বপ্নভঙ্গের দিকেই আমরা চলেছি।’’
আসন্ন লোকসভা ভোটের আবহে এই কথাগুলো এক বৃহৎ হতাশার ছবিই তুলে ধরে। এ বারের নেতাজি-স্মারক বক্তৃতায় ‘ভারতের নেতৃত্বদান’ বিষয়ে বলছিলেন গোপালকৃষ্ণ। ব্রিটিশ চিন্তাবিদ টমাস কার্লাইলের পুরনো উদ্ধৃতির সূত্র ধরে প্রাক্তন রাজ্যপাল বললেন, ‘‘নেতা তৈরি কঠিন নয়। নেতারা ছাপানো নোটের মতো। তবে জাল নোট কি না, সেটা যাচাইযোগ্য!’’ কয়েক দশক আগে জয়প্রকাশ নারায়ণের উত্থানের সময়ে একটা স্লোগান জনপ্রিয় হয়েছিল। আন্ধেরে মে এক প্রকাশ/ জয়প্রকাশ, জয়প্রকাশ! গোপালকৃষ্ণ বলছিলেন, ‘‘কয়েক বছরে বড়-বড় নেতার উদয় দেখেছে এই দেশ, যাঁরা অচিরেই অস্তগামী। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘আরও কয়েক বছর ধরে এটাই চলবে।’’
এই হতাশার পটভূমিতে গাঁধীজি-নেতাজিদের যুগকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছেন গাঁধী-পৌত্র। তাঁর কথায়, ‘‘তখনও রাজনৈতিক টক্কর, মতবিরোধ এ সব ছিল, কিন্তু পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাসেরও জায়গা ছিল। গাঁধী-সুভাষ, গাঁধী-নেহরু, সুভাষ-নেহরু বা পরবর্তী কালে নেহরু-অম্বেডকর আন্তঃসম্পর্কের বিচিত্র রসায়ন ফুটে উঠেছে। গোপালকৃষ্ণের ব্যাখ্যা, ‘‘ভারতের নেতৃত্ব অশোক, আকবরের সময়েও ঢের কঠিন ছিল। কিন্তু নেতাদের প্রতি বিশ্বাসের এমন আকাল আগে দেখা যায়নি। দুর্নীতি, ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে বিকিয়ে যাওয়া নেতাদের কাছে একফোঁটাও আশা নেই আর।’’
গাঁধীপৌত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে এক মত নেতাজির নাতিও। তৃণমূল সাংসদ সুগতবাবুর কথায়, ‘‘অনুপ্রেরণা আমাদের অতীত থেকেই নিতে হবে। নৈতিক নেতৃত্বই দেশকে দিশা দেখাতে পারে।’’ গোপালকৃষ্ণও সেই বিকল্প নেতৃত্বের হয়ে সওয়াল করলেন। ‘‘রাজনীতির নেতা নয়, সমাজদর্শন, পরিবেশদর্শন, প্রযুক্তিদর্শনের নেতা দরকার।’’ পুঁজিশাসিত সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিবেশের সঙ্কট থেকে সাধারণের কণ্ঠরোধের নানা ছবি তুলে ধরলেন তিনি। ‘‘রাফালে-চুক্তির মতো বড়সড় কিছু নয়, তথ্য জানার অধিকারে সওয়াল করেও এ দেশে ৬০ জন খুন হয়েছেন।’’
গাঁধীর সার্ধশতবর্ষে নেতাজি-স্মারক বক্তৃতায় নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর-র তরফে কৃষ্ণা বসু, সুগত বসুরা গাঁধীপৌত্রকেই ডেকেছিলেন। সুগত মনে করান, তাঁর মৃত্যুর সাত দিন আগে নোয়াখালিতে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ভাবে সুভাষের জন্মদিনে অদ্বিতীয় দেশপ্রেমিককে স্মরণ করেছিলেন গাঁধী। ধর্মশ্রেণি নির্বিশেষে সবার কাছের মানুষ সুভাষের স্মৃতিতে উদ্বেল হয়েছিলেন। গোপালকৃষ্ণ বলেন, ‘‘গাঁধী-সুভাষ কেউই পরাজয় বা মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না।’’ সমকালের অদ্ভুত আঁধারে গাঁধী-সুভাষদের মৃত্যুত্তীর্ণ স্মৃতিই তখন সম্বল।