সম্ভাষণ: ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত মাকরঁ-র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে।
এশিয়ায় ভারতই ফ্রান্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে মনে করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। ভারত সফরের শুরুতেই তিনি জানিয়ে দিলেন, ফ্রান্স ইউরোপে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে উঠতে চায়। সেই সঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনা আধিপত্য বিস্তারের মোকাবিলায় আজ বড় পদক্ষেপ করেছে দু’দেশ।
চার দিনের সফরের গোড়ায় আজ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ-সহ শীর্ষ ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন মাকরঁ। পরে প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতেও যাওয়ার কথা তাঁর।
এ দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৪টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দু’দেশ। যার মোট অর্থমূল্য ১৬ হাজার কোটি ডলার। সেই সঙ্গে সন্ত্রাস ও ভারত মহাসাগর নিয়ে দিল্লির অবস্থানকে পুরোপুরি সমর্থন করেছেন মাকরঁ। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছে ভারত ও ফ্রান্স। ভারত মহাসাগর-সহ কোনও আন্তর্জাতিক জলপথই শক্তি প্রদর্শনের স্থান হতে পারে না বলেও আমরা মনে করি।’’ তাঁকে পাশে নিয়ে মোদী বলেন, ‘‘ভারত মহাসাগরে চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাই। কারণ ওই জলপথ গোটা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ।’’ নাম না করলেও এ ক্ষেত্রে ইঙ্গিত যে চিনের দিকে তা নিয়ে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের। আজ এক নয়া সমঝোতায় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজের জন্য নিজেদের বন্দর খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফ্রান্স। একই ভাবে ভারতীয় বন্দরে আশ্রয় নিতে পারবে ফরাসি যুদ্ধজাহাজ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ফ্রান্সের হাতে বেশ কিছু দ্বীপ রয়েছে। কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারত ওই দ্বীপগুলিতে ঘাঁটি তৈরিরও সুযোগ পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিনা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার মোকাবিলা করা অনেকটা সহজ হবে। চিন ও পাকিস্তানের চাপে উদ্বিগ্ন ভারতের পক্ষে ফ্রান্সের মতো ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশের সমর্থন এখন বিশেষ প্রয়োজনীয় বলে মত সাউথ ব্লকের কর্তাদের। ছ’টি পরমাণু চুল্লি তৈরি নিয়েও দু’দেশের মধ্যে এ দিন সমঝোতা হয়েছে।
তবে এ দিনও বিঁধে রইল রাফালে বিতর্ক। সম্প্রতি ফ্রান্সের সঙ্গে রাফালে যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। মোদী জমানায় হওয়া নয়া চুক্তিতে ওই যুদ্ধবিমান কিনতে ভারতকে অনেক বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে বলে দাবি কংগ্রেসের। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরাসরি মোদীকে বিঁধেছেন রাহুল গাঁধী। বিতর্কের মধ্যেও সংসদে রাফালে যুদ্ধবিমান চুক্তির খুঁটিনাটি প্রকাশ করতে রাজি হয়নি কেন্দ্র। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গোপন তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে আজ নয়া সমঝোতা হয়েছে দু’দেশের। দুই রাষ্ট্রনেতা বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চায় দু’দেশ। কিন্তু কংগ্রেস দাবি করেছে, মিশর বা কাতারের চেয়ে বিমান-প্রতি প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার বেশি দিতে হচ্ছে ভারতকে। বিজেপির পাল্টা দাবি, কংগ্রেস দেশবাসীকে ভুল বোঝাতে চাইছে।