taliban

ISIS: পিছনে সেই আইএসআই, তালিবানের পর আইসিস নিয়েও চিন্তা বাড়ছে নয়াদিল্লির

কাশ্মীরে রক্তক্ষয়ী জেহাদের প্রস্তুতিতে আইএস-কে যে তলে তলে উপত্যকায় সক্রিয় রয়েছে, তারও প্রমাণ হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ০৭:০৮
Share:

ফাইল চিত্র।

কাবুল বিমানবন্দরে গত কাল আইএস-কে (ইসলামিক স্টেট খোরাসন প্রভিন্স) গোষ্ঠীর ভয়াবহ হামলা নতুন করে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে নয়াদিল্লিকে। আফগানিস্তানে পট পরিবর্তনের পরে তালিবান বাহিনী কাশ্মীর ফ্রন্টে সক্রিয় হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। এ বার বাড়তি বিপদ হিসাবে যোগ হল আইএস-কে। এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে এলাকা দখল নিয়ে তালিবান ও আইএস-কে-র মধ্যে সংঘর্ষ চললেও, দুই গোষ্ঠীকেই পিছন থেকে চালনা করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তাই এক যোগে না হলেও, দুই গোষ্ঠী আলাদা ভাবে কাশ্মীরে সন্ত্রাস চালাতে পারে— এমন আশঙ্কায় নর্থ ব্লক।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান নিয়ে নিজেদের অবস্থা ও অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলিকে বোঝাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে দিল্লি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিয়ো দ্রাঘির সঙ্গে এ দিন টেলিফোনে কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। আফগানিস্তানে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়েই মূলত কথা হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রীর।

বর্তমানে আফগানিস্তানের দখল তালিবানের মাধ্যমে বকলমে পাকিস্তানের হাতে চলে যাওয়ায় আইএস-কে জঙ্গিরা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে ভারতের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, দীর্ঘ সময় ধরেই ভারতের জমিতে নিজেদের ঘাঁটি বানাতে সক্রিয় রয়েছে আইএস-কে। ভারতে কাশ্মীর ছাড়া দক্ষিণের কিছু রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে আইএস ভাবধারার কিছু মডিউলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। এরা মূলত জেহাদি ভাবধারায় তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু এ বারে পরিস্থিতি ভিন্ন। পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ মদতে আইএস-কে আগামী দিনে উপত্যকায় জঙ্গি কার্যকলাপে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, এত দিন আইএস-কে মূলত আফগানিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের লড়াই ছিল সে দেশের সরকার ও আমেরিকার সেনাদের সঙ্গে। বর্তমানে যে তালিবান জঙ্গিরা ক্ষমতা দখল করেছে তাদের সঙ্গেও বিবাদ রয়েছে আইএস-কে-র। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, দু’শিবিরের সমঝোতা হয়ে গেলেই আইএস-কে-র নিশানা হবে কাশ্মীর। তাদের মদত দেবে পাক জঙ্গি হক্কানি গোষ্ঠী। এর ফলে কাশ্মীরে সন্ত্রাসের দায় এসে পড়বে ইসলামিক স্টেটের ঘাড়ে। সরাসরি জঙ্গিদের মদত দেওয়ার দায় এড়াতে পারবে পাকিস্তান।

Advertisement

কাশ্মীরে রক্তক্ষয়ী জেহাদের প্রস্তুতিতে আইএস-কে যে তলে তলে উপত্যকায় সক্রিয় রয়েছে, তারও প্রমাণ হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। গত জুলাই মাসে কাশ্মীরে গ্রেফতার হয়েছে উপত্যকায় আইএস-কে-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য উমর নাসির ওরফে কাসিম খোরাসনি। গত মাসে টেলিগ্রাম অ্যাপের একটি গ্রুপের মাধ্যমে আইএস-এর সদস্য সংগ্রহের তদন্ত করতে গিয়ে কাশ্মীরের অনন্তনাগ থেকে গ্রেফতার করা হয় উমরকে। ওই জঙ্গিকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ‘ওয়ালিয়ত আল হিন্দ’ (ইসলামিক স্টেট প্রভিন্স অব ইন্ডিয়া) গঠনের পক্ষে প্রচার ও আইএস-কে-র জন্য জঙ্গি সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল তারা। ‘ওয়ালিয়ত আল হিন্দ’ ভাবধারা সম্পর্কে ২০১৯ সালে প্রথম জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তদন্তে জানা যায়, এটি আইএস-এর একেবারেই ভারত-কেন্দ্রিক কর্মসূচি। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন, বাবরি মসজিদ ভাঙা ও কাশ্মীরে সংখ্যালঘুদের উপরে ‘অত্যাচারের’ প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলে যুবকদের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নামার আহ্বান করা হয়েছে। এই আন্দোলনের বৃহত্তর অংশ হিসাবে উপমহাদেশের মুসলিমদের ভারতে ‘গজওয়া-ই-হিন্দ’ বা ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে অংশ নিতেও আহ্বান করা হয়। ‘গজওয়া-ই-হিন্দ’ অনুযায়ী অতীতের মুসলিম শাসকদের মতো সিরিয়া থেকে আইসএস বাহিনী কালো পতাকা নিয়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারতে আক্রমণ চালাবে এবং এ দেশ অধিকার করবে।

অনুপ্রবেশ প্রশ্নে গোড়া থেকেই শক্ত হাতে রাশ না টানলে আগামী দিনে কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্র। কারণ, কাশ্মীরের যুব সমাজের একটি অংশ তালিবানের ক্ষমতা দখলে উল্লসিত। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি অংশের মতে, কাশ্মীর পরে। এখন আইএস-কে-র প্রধান শত্রু আফগানিস্তানের দখল নেওয়া তালিবান বাহিনী। কট্টর আইএস-কে মনে করে, আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ যাত্রায় ক্ষমতা এসেছে তালিবান, যা শরিয়তের পরিপন্থী। যার প্রতিবাদ জানাতে ও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই কাল কাবুল বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে আইএস-কে। কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, আপাতত ক্ষমতা দখল নিয়ে দুই শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকবে। যার সুযোগ নিতে হবে নয়াদিল্লিকে। দুই শিবিরের মধ্যে যারা ভারতের পক্ষে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর, তাদের বেছে নিতে হবে নয়াদিল্লিকে। তবে এ ক্ষেত্রে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ভূমিকাও তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। এক স্বরাষ্ট্র কর্তার কথায়, কার্যত দুই শক্তির মেন্টর হিসাবে আইএসআই কখনওই চাইবে না তালিবান ও আইএস-কে-র মধ্যে বিবাদ দীর্ঘ সময় ধরে চলুক। বরং তারা চাইবে দুই শক্তি এক হয়ে বা প্রয়োজনে আলাদা হয়ে কাশ্মীরে সন্ত্রাস চালিয়ে ভারতে অস্থিরতা বজায় রাখুক। দুই ক্ষেত্রেই লাভবান হবে পাকিস্তান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement