প্রতিহিংসার পিছনে মোদীর দফতর: রাহুল

ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন সনিয়া-রাহুল। রাহুল গাঁধী নিজে দাবি করলেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা নিয়ে একশো শতাংশ প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৫৭
Share:

ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন সনিয়া-রাহুল। রাহুল গাঁধী নিজে দাবি করলেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা নিয়ে একশো শতাংশ প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলেই ন্যাশনাল হেরাল্ডের ফাইল বন্ধ করেছিল ইডি। সরকার নতুন ডিরেক্টর এনে নতুন করে ফাইল খুলিয়েছে।

Advertisement

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া-রাহুলদের তলব করেছে আদালত। দিল্লি হাইকোর্ট এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ খারিজ করার পরেই রণকৌশল বদলে ফেলে কংগ্রেস। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আদালতের সমন মাথা পেতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সনিয়া। পাশাপাশি প্রতিহিংসার রাজনীতির স্লোগান তুলে সংসদ অচল করে দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়। গত কাল সনিয়া ‘কিছুতেই ডরাই না’ বলে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। আজ আর এক ধাপ সুর চড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললেন রাহুল। পরপর দু’দিন সংসদের কাজকর্ম শিকেয় তুলে কংগ্রেস নেতৃত্ব বোঝালেন, শাসক দলের সঙ্গে অসহযোগিতাই এখন তাঁদের নীতি।

গুলাম নবি আজাদ-আহমেদ পটেলরা আজ স্পষ্ট জানান, এ যাত্রা পণ্য পরিষেবা কর বিল বা অন্য কর্মসূচি সংসদে পাশ করানোর আশা ভুলে যাক সরকার। কারণ প্রতিহিংসার রাজনীতি চালিয়ে বিরোধী দলের থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। সেই মোতাবেক গত কালের পরে আজও সংসদ অচল করে রাখে কংগ্রেস। তাদের সাংসদদের চেঁচামেচির জেরে রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করতে হয়। রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যার জোরও কম। সে তুলনায় লোকসভায় শাসক জোট দলে অনেক ভারী হলেও সুবিধা বিশেষ হয়নি। কংগ্রেস সাংসদরা একটানা স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ায় তৃণমূলও। হট্টগোলের মধ্যেই কিছু বিল নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হলেও সেটা সরকার এবং বিরোধীদের তরজাতেই পর্যবসিত হয়। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে মুলতুবি হয় লোকসভার অধিবেশনও।

Advertisement

কংগ্রেসের এই ‘প্রতিহিংসা’ অস্ত্রের মোকাবিলায় বিজেপির তরফে আজ পাল্টা চাল ছিল দু’টো। প্রথমত, বিজেপি এ দিন বলতে থাকে যে কংগ্রেস সংসদে হইচই বাধিয়ে আসলে বিচারব্যবস্থাকেই হুমকি দিচ্ছে। সনিয়া-রাহুলদের ডেকে পাঠিয়েছে আদালত। কংগ্রেস তাই নিয়ে সংসদ অচল করে দিচ্ছে। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর প্রশ্ন, ‘‘আদালত ডেকে পাঠালে সংসদ কী করবে? এটা কি সংসদের কাজ? আপনারা (কংগ্রেস নেতৃত্ব) তার মানে আদালতকেই বলছেন যে, আপনাদের তলব করার সাহস তার হয় কী করে!’’ বিজেপির এই আক্রমণকে উপেক্ষা করতে পারেনি কংগ্রেস। তাকে এর উত্তরে বারবার বলতে হয়েছে যে, দলের প্রতিবাদ আদালতের বিরুদ্ধে নয়। বরং মোদী সরকারের ‘স্বৈরাচারে’র বিরুদ্ধে। রাহুলও এ দিন বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। সত্য প্রকাশ পাবেই। আদালতকে আসলে কারা শাসাচ্ছে, সেটা দেখাই যাচ্ছে।’’দ্বিতীয় কৌশল হিসেবে বিজেপি দাবি জানায় যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যে সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে, তার প্রমাণ পেশ করুক কংগ্রেস। সংসদে প্রতিমন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর যদি সাহস থাকে, যদি তিনি এক জন সত্যিকার দলনেতা হয়ে থাকেন, তা হলে সংসদে প্রমাণ দিন...! সংসদে মোকাবিলা করার মুরোদ নেই, দেখেই বোঝা যাচ্ছে মামলায় ফেঁসে উনি নার্ভাস হয়ে গেছেন।’’ বেঙ্কাইয়া তোপ দাগেন, ‘‘কংগ্রেস ভাবছে তারা মোদীকে আঘাত করছে। আসলে তারা ভারতকেই আঘাত করছে।’’ টিপ্পনী কেটে তিনি এও বলেন, রাহুল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে নিশানা করেছেন। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা তো হয়েছিল মনমোহন সিংহের জমানায়! এ সব আক্রমণের জবাবে রাহুল নিজে এ দিন তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে ওঠেননি বটে। তবে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র তথাকথিত নজির কংগ্রেসের তরফে এ দিন সংসদের দুই কক্ষেই তুলে ধরা হয়। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ দাবি করেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় দুর্নীতির প্রমাণ না পেয়ে মোদী জমানাতেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মামলার ফাইল বন্ধ করে দিয়েছিল। তৎকালীন ইডি ডিরেক্টরের মত ছিল, ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান’ অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। তাদের মাধ্যমে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু সরকার ওই ডিরেক্টরকে সরিয়ে দিয়ে নতুন ডিরেক্টর নিয়োগ করে। আজাদের কথায়, ‘‘বোঝা যাচ্ছে, প্রতিহিংসার রাজনীতির ভাবনা নিয়েই চলছে সরকার।’’লোকসভায় দলের সওয়াল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে ছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁকে মাঝে মাঝে পরামর্শ দিচ্ছিলেন সনিয়া। জন্মদিনে কপালে প্রসাদী টিকা লাগিয়ে আজ লোকসভায় এসে বসেন। পিছনেই বসেন রাহুল। মা-ছেলের নেতৃত্বেই দিনভর সংসদ অচল করে রাখে কংগ্রেস। জিরো আওয়ারে মল্লিকার্জুন সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, বিজেপি নেতাদের জন্য এক রকম আর বিরোধীদের জন্য আর এক রকম আইন নিয়ে চলছে কেন্দ্র। খড়্গে-র অভিযোগ, মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগঢ়-রাজস্থানের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সরকার চোখ বুজে থাকছে। অথচ হিমাচলের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ, গুজরাতের কংগ্রেস নেতা শঙ্করসিন বাগেলা বা রাজস্থানে অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে তারা অতি সক্রিয়। এটাই প্রতিহিংসার রাজনীতি, দাবি কংগ্রেসের।

বিজেপি নেতাদের ধারণা ছিল, যেহেতু ন্যাশনাল হেরাল্ডের মামলাটি দুর্নীতি ও জালিয়াতি সংক্রান্ত, তাই অন্য দলকে কংগ্রেস পাশে পাবে না। কিন্তু গত কাল এবং আজ, দু’দিনই তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোয় বেকুব বনেছেন তাঁরা। তার মধ্যে সাংসদ বীরেন্দ্র সিংহ আবার রাহুল-জ্যোতিরাদিত্যর ‘সাদা চামড়া’ নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে অস্বস্তিতে ফেলেন। স্পিকারের কাছে এই নিয়ে নালিশ জানায় কংগ্রেস। স্পিকার শেষমেশ শব্দ দু’টি বাদ দেন।

বিজেপির আশার কথা, মায়াবতী এখনও কংগ্রেসের সমর্থনে দাঁড়ায়নি। উল্টে সপা নেতা রামগোপাল যাদব অভিযোগ করেন, ‘‘অতীতে কংগ্রেসও প্রতিহিংসার রাজনীতি করত।’’ কংগ্রেস নেতারা বুঝছেন, ন্যাশনাল হেরাল্ডের লড়াইটা তাঁদের নিজেদের লড়াই। তৃণমূল পাশে দাঁড়ালেও তা সাময়িক। কংগ্রেসের কৌশল কংগ্রেসকেই ঠিক করতে হবে। আজ সন্ধেয় চিদম্বরম, কপিল সিব্বল, এ কে অ্যান্টনির মতো নেতাদের সঙ্গে আজ বৈঠক করেন সনিয়া। তার আগে দলের সাংসদদের ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কে দলের যুক্তি কী হবে, সেগুলো পাখি পড়ানোর মতো বোঝান। সাংসদদের বোঝানো হয় যে, কোনও ভাবেই যেন বিচারব্যবস্থার সমালোচনা না-করা হয়। এই বার্তা যেন না-যায় যে, কংগ্রেস আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলের লক্ষ্য হবেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকার। কপিল মনে করিয়ে দেন, ‘অনির্বাচিতের

স্বৈরাচার’ বলে আদালতের সমালোচনা অরুণ জেটলিই করেছিলেন আগে। কংগ্রেস নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement