ভুল দিকে বড় লাফ! মোদীকে তির অমর্ত্যের

পাকিস্তান আমাদের বাঁচিয়ে দিল নিকৃষ্টতম হওয়া থেকে: অমর্ত্য সেন

মোদী এবং বিজেপি সম্পর্কে প্রকাশ্যেই বহু বার নিজের বিরুদ্ধ মত তুলে ধরেছেন অমর্ত্য। সে কারণে বিজেপির একাধিক নেতা তাঁকে বিভিন্ন ভাবে আক্রমণও করেছেন। কিন্তু তিনি যে তাতে দমতে নারাজ, তা বুঝিয়ে মোদী জমানায় আর্থিক বৈষম্য, জাতপাত, জনজাতিদের বিষয়গুলি নিয়ে এ দিন সরব হন প্রবীণ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪১
Share:

অমর্ত্য সেন

দু’জনেই গেরুয়া শিবিরের কাছে ঘোষিত চক্ষুশূল! একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। অন্য জন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ। রবিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এসে দু’জনেই তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদীর জমানাকে। অমর্ত্য সেনের মতে, গত চার বছরে দেশ ‘ভুল দিকে বিরাট লাফ দিয়েছে’! যার জেরে উপমহাদেশে পাকিস্তানের পরেই ভারত এখন দ্বিতীয় নিকৃষ্ট দেশ! আর মোদী সরকারের আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য প্রকল্পকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে ব্যাখ্যা করে সরকারের বিভিন্ন নীতিকে তুলোধনা করলেন জঁ দ্রেজ।

Advertisement

রবিবার জঁ দ্রেজের সঙ্গে যৌথ ভাবে লেখা ‘অ্যান আনসার্টেন গ্লোরি: ইন্ডিয়া এন্ড ইটস কন্ট্রাডিকশন’ বইয়ের হিন্দি অনুবাদ, ‘ভারত অউর উসকে বিরোধাভাস’-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে অমর্ত্য বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়েছে।…২০১৪-র পর থেকে ভুল দিকে বিরাট লাফ দিয়েছে। আর্থিক উন্নতিতে দ্রুততম হয়েও আমরা পিছনের দিকে যাচ্ছি।’’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানান, বছর কুড়ি আগেও এই অঞ্চলের ছ’টি দেশের মধ্যে ভারত ছিল দ্বিতীয় সেরা। শ্রীলঙ্কার পরেই। ‘‘এখন দ্বিতীয় নিকৃষ্ট! আমাদের নিকৃষ্টতম হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান!’’, বলেন অমর্ত্য।

মোদী এবং বিজেপি সম্পর্কে প্রকাশ্যেই বহু বার নিজের বিরুদ্ধ মত তুলে ধরেছেন অমর্ত্য। সে কারণে বিজেপির একাধিক নেতা তাঁকে বিভিন্ন ভাবে আক্রমণও করেছেন। কিন্তু তিনি যে তাতে দমতে নারাজ, তা বুঝিয়ে মোদী জমানায় আর্থিক বৈষম্য, জাতপাত, জনজাতিদের বিষয়গুলি নিয়ে এ দিন সরব হন প্রবীণ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। বিজেপি সরকারের হিন্দুত্বের রাজনীতিকে নিশানা করে অমর্ত্য বলেন, ‘‘এই সব কারণেই সার্বিক বিরোধী ঐক্যের বিষয়টি এই সময়ের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়টি মোদীর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর লড়াই না। এটা ভারতের বিষয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ২০১৯-এ অনিশ্চিত বিজেপির দেড়শো-ও!

ই অনুষ্ঠানেই জঁ দ্রেজ-ও নিশানা করেন মোদীকে। ইউপিএ জমানায় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মোদী জমানায় তিনি কার্যত ব্রাত্য। গত চার বছরে একাধিক ভোটে কার্যত গো-হারার পরে গত এপ্রিলে বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ ঘোষণা করেন মোদী। ওই প্রকল্পটিকে নিয়ে বিপুল প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। এ দিন প্রকল্পটিকে স্রেফ ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে ব্যাখ্যা করে দ্রেজ বলেন, ‘‘এই বছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। যদি সেটা পুরোটা খরচও করা হয়, তা হলেও মাথাপিছু বরাদ্দ আসলে ২০ টাকা!’’ নোট বাতিলের জন্য আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অংশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আগেই মন্তব্য করেছিলেন দ্রেজ। এ দিন ফের সেই মত তুলে ধরে তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে দেশের পিছিয়ে পড়া শ্রেণি মোটেই ভাল থাকেনি। মোদী জমানার শিক্ষানীতিকেও এ দিন আক্রমণ করেন দ্রেজ। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের চূড়ান্ত বৈষম্য মেটাতে সকলের জন্য উন্নতমানের শিক্ষাই দরকার এ দেশের। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ বছরে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও বড় পদক্ষেপ করাই হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement