প্রতীকী ছবি।
চাবাহার রেল প্রকল্প থেকে ভারতকে সরিয়ে দিল ইরান। কূটনৈতিক সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে। অতিমারি কবলিত বিশ্বে ভারত যখন বহুপাক্ষিক অক্ষকে শক্তিশালী করে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে, তখন এই সংবাদ নিঃসন্দেহে সাউথ ব্লকের কাছে বড় ধাক্কা। কটনৈতিক সূত্রের মতে, এই ঘটনার পিছনে বেজিংয়ের ‘অদৃশ্য হাত’ রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য এখনও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
পাকিস্তানের গ্বদর বন্দর থেকে ৭২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত চাবাহার ভারতের কাছে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরান এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার ফলে পাকিস্তানকে এড়িয়ে মধ্য এশিয়ায় নিজস্ব পণ্য রফতানির জন্যই প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্পে শামিল হয়েছিল ভারত। নিকটবর্তী গ্বদর বন্দরটিকে কার্যত চিনের হাতে তুলে দিয়েছে ইসলামাবাদ। তাই ভূ-কৌশলগত লড়াইয়ে চাবাহার ভারতের হাতে থাকার অর্থ, বেজিংয়ের গতিবিধির উপরে নজর রাখা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, পুঁজি জোগানে বিলম্বের কারণ দেখিয়ে রেল প্রকল্পটি (চাবাহার-জাবেদিন ৬২৮ কিলোমিটার) থেকে ভারতকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত পরিকল্পনা অনেকটাই ধাক্কা খেল। চার বছর আগে রেল প্রকল্পটিতে সই করে নয়াদিল্লি ও তেহরান। প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছিল ২০২২-এর মার্চে। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইরান ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে সই হয়েছিল এই প্রকল্প সংক্রান্ত চুক্তি। কথা ছিল, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইরকন এই প্রকল্পের যাবতীয় কারিগরি দিক দেখার পাশাপাশি, প্রায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রকল্পটি রূপায়নের জন্য দেবে। সূত্রের খবর, ইরকনের কর্তারা বেশ কয়েকবার সাইট পরিদর্শনের পরেও কাজ শুরু নিয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছিলেন। ইরান নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণেই এই বিলম্ব করা হচ্ছিল এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। তাদের মতে, ভারতের এই ঢিলেঢালা মনোভাবের সুযোগ নিয়ে চিন ক্রমশ প্রভাব বাড়িয়েছে চাবাহার-সহ ইরানের বিভিন্ন বাণিজ্য ক্ষেত্রে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চিনের সঙ্গে ইরানের কৌশলগতক্ষেত্রে অংশীদারির জন্য সুবিশাল আর্থিক চুক্তি (৪০ হাজার কোটি ডলার) হওয়ার পরেই, এই পদক্ষেপ করল তেহরান। এই খবর সামনে আসার পরেই মোদী সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কথায়, “চাবাহার-সংলগ্ন রেল চুক্তি থেকে ভারত বাদ পড়েছে। চিন চুপচাপ ভাল কাজ করেছে বলে তাদের আরও ভাল সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটাই মোদী সরকারের কূটনীতি। কিন্তু আমরা আপনাকে প্রশ্ন করতে পারব না!”