গালওয়ান নিয়ে বর্তমানকে বিঁধলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
মৌনের অভিযোগে বিদ্ধ হতেন যিনি, ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদ নিয়ে তিনিই হলেন মুখর। মৌন ভাল, নাকি মন্দ, সে প্রসঙ্গে গেলেন না ঠিকই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা না করে কথা বলার যে বিপদ রয়েছে, সে কথা নিজের উত্তরসূরিকে স্মরণ করালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। শব্দ খরচ করায় তাঁর অনীহা রয়েছে, এমনই অভিযোগ বার বার উঠত তাঁর নিজের জমানায়। কিন্তু সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সেই মনমোহনই এ বার বললেন, শব্দ খরচের আগে ‘শব্দের গুরুত্ব বুঝে’নেওয়া উচিত।
গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের পর সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘ভারতের কোনও ভূখণ্ড বা কোনও পোস্ট বেদখল হয়নি।’’ মোদীর এই মন্তব্যের পরেই বিরোধীরা চেপে ধরে শাসক দলকে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, চিন যদি ভারতীয় ভূখণ্ড বা পোস্ট দখল না-ই করে থাকে, তাহলে সংঘর্ষ কেন হল? তাঁদের বক্তব্য ছিল, উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট যে চিন ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে। তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী ধরেই নিচ্ছেন গালওয়ান উপত্যকার ওই বিতর্কিত ভূখণ্ড চিনের?
এই ইস্যুতেই এ বার বিবৃতি জারি করে নিজের মতামত জানালেন দেশের দু’বারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মনমোহন সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এখন সরকারের কাজকর্মই ঠিক করে দেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের কী ভাবে দেখবে। দেশকে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের নিজেদের কর্তব্যের গুরুত্ব বোঝা উচিত। আর আমাদের গণতন্ত্রে সেই দায়িত্বভার প্রধানমন্ত্রীর অফিসের উপর ন্যস্ত। তাই প্রধানমন্ত্রী যে শব্দ ব্যবহার করছেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে তার তাৎপর্য কী হতে পারে, সব সময় তা মাথায় রাখা উচিত।’’
আরও পড়ুন: আগ্রাসন হলে জবাব দেওয়ার ক্ষমতা সেনাকে, এত দিন কি ছিল, প্রশ্ন প্রতিরক্ষা মহলে
নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন দশ বছর। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই মনমোহন সিংহ বলেছেন, চিন সবসময়ই বেআইনি ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ নিজেদের বলে দাবি করে। গালওয়ান উপত্যকা, প্যাংগং লেকের মতো ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়ে বারবার। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই হুমকি ও আগ্রাসনের কাছে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের সমঝোতা করতে পারি না।’’ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর, সর্বদল বৈঠকে মোদীর ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছে চিন। সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বর্তমানের প্রতি প্রাক্তনের সাবধানবাণী, ‘‘আমাদের কোনও বক্তব্য যাতে ওরা নিজেদের অবস্থানের স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেটা খেয়াল রাখা উচিত। সঙ্কটের মোকাবিলায় সরকারের সমস্ত শাখা যাতে সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়, সেটাও দেখতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ভারতের ১০০ বনাম চিনের ৩৫০ সেনা! গলওয়ানে সে দিন ৩ ঘণ্টা চলেছিল সংঘর্ষ
জাতীয়তাবাদের স্বার্থে এখন সবার একজোট হওয়া উচিত বলে মনে করেন মনমোহন সিংহ। সেই বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘সরকারকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ভুল তথ্য দেওয়া কূটনীতি নীতি নির্ধারণকারী নেতৃত্বের বিকল্প হতে পারে না।’’