Leh

‘এলএসি পেরিয়ে বেজিং যাবার ইচ্ছে? গাড়ি ঘোরান!’

দায়িত্বে থাকা অফিসার অবাক। ‘‘এত দূর এলেন কী ভাবে?’’ বলা গেল, কী ভাবে তা বড় কথা নয়। সামনে এগনো যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

Advertisement

স্যমন্তক ঘোষ

লাদাখ শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ১৫:৪৪
Share:

লেহ্ থেকে গালওয়ানের পথে সেনা-ট্রাক, গত সোমবার। ছবি: রয়টার্স।

লেহ্ বাজারটা গ্যাংটকের মতো দেখতে হয়ে গিয়েছে। পুরনো বাজারের পাথর বসানো রাস্তা সোজা উঠে যেত পুরনো প্যালেসের দিকে। সরু গলির দুই ধারে গায়ে গায়ে লাগানো বহু শতকের পুরনো বাড়ি। প্যালেস সংস্কার হয়েছে বছর কয়েক হল। লাসায় যাঁরা সংস্কারের কাজ করেছিলেন, লেহ্ প্যালেসের দায়িত্বও পেয়েছিলেন তাঁরাই।

Advertisement

নতুন বাজারটা পিঙ্ক ফ্লয়েডিশ, ফাঙ্কি। এবড়োখেবড়ো কোবাল্ট স্টোন, বাহারি বাতিস্তম্ভ, বসার বেঞ্চ— সবটাই আধুনিক। কিন্তু দু’ধারের পুরনো দোকানগুলোর ভোল বদলায়নি। ফলে পুরো বিষয়টা ইলিশ বিরিয়ানির মতো বেমানান হয়ে গিয়েছে। লকডাউনের বাজারে অড নম্বরে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। লোক বিশেষ নেই।

তারই মধ্যে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ভদ্রলোক। বাজারের মুখেই রাস্তার ডান হাতে সামান্য ওপরে দোকানটা। বোর্ডে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘সাউথ ইন্ডিয়ান খানা’। ভদ্রলোকের চেহারা এক ঝলকে দেখলে দক্ষিণ ভারতীয় বলে মনে হয় না। বিহার অথবা উত্তরপ্রদেশের বলেও মনে হতে পারে। তবে যে দৃষ্টিতে ওই দোকানের দিকে তিনি চেয়ে ছিলেন, বুঝতে অসুবিধা হয় না, ইডলি-দোসার স্বাদ অনেক দিন জিভে পৌঁছয়নি।

Advertisement

লেহ্ প্যালেস। ছবি: শাটারস্টক।

বছর ৪০-এর এই জওয়ানকে দেখে ৯ বছর আগের আর এক দক্ষিণী জওয়ানের কথা মনে পড়ে গেল। শহুরে বীরত্বে হোটেল মালিকের নিষেধ উপেক্ষা করে বেলা একটায় প্যাংগংয়ের পথে রওনা হয়েছিলাম আমরা। বাইক বাহনে। চাংলা পাসের তলায় যখন পৌঁছলাম, বিকেল সাড়ে চারটে। সেনাবাহিনীর একটি ছোটখাটো ক্যাম্প রয়েছে সেখানে। সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে যাঁদের পাঠানো হয়, ওই ক্যাম্প তাঁদের অ্যাক্লামাটাইজেশনের জন্য। গোর্খা রেজিমেন্টের সেই সেনারাও ওই দিন চাংলায় উঠতে নিষেধ করেছিলেন। নাছোড় আমরা যখন পাসের মাথায় পৌঁছই, চার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অল্টিচিউড সিকনেস এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বাইক নিয়ে সহযাত্রী বিশ্ব খাদে নেমে যেতে চাইছে। দেবদূতের মতো সেই সময় হাজির হয়েছিলেন এক দক্ষিণী জওয়ান। সকলকে নিয়ে গিয়েছিলেন পাসের ওপরেই তৈরি অস্থায়ী সেনা তাঁবুতে। হাসপাতাল। পর পর খাটে শুয়ে অক্সিজেন নিয়ে খানিক স্বস্তি পেয়েছিলাম সকলে। ওই জওয়ানই বলেছিলেন, রাতের দিকে দমের কষ্ট আরও বাড়ে। কেন? জানা নেই।

লেহ্ শহরে এমন পুলিশ চেকিং আগের বার এসে দেখিনি। ছবি: এএফপি।

বাজারের মুখে যে জওয়ানের সঙ্গে দেখা হল, ইডলি-দোসার আলোচনার ফাঁকে বেরিয়ে পড়ল তিনি গালওয়ান-ফেরত। তাঁর কথার সত্যতা যাচাই করা মুশকিল। সাংবাদিক আর সেনার মধ্যে এখানে এক আশ্চর্য মিল। লেহ্ শহরে ঢোকা ইস্তক এমন এক জনও সেনা অফিসার কিংবা জওয়ানের সঙ্গে আলাপ হয়নি, যিনি গালওয়ান-ফেরত নন বলে দাবি করেছেন। হোটেলে আলাপ হওয়া বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত দাবি করেছেন, তিনি গালওয়ানে যাতায়াত করছেন। রাস্তা তৈরির কাজে।

তবে এই জওয়ানের ভাষ্য আরও অনেকের চেয়ে গ্রহণযোগ্য। ঘটনার দিনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ শুনিয়েছিলেন একটাই শর্তে। সব কথা লেখা যাবে না। রেকর্ডও করা যাবে না।

আরও পড়ুন: তিব্বত হতে রাজি নই! কেন্দ্রশাসিত হওয়ার ‘অপমান’ সয়েও বলছে লাদাখ

যা বললেন, তা এত দিনে বহু বার খবর হয়ে গিয়েছে। বর্ণনায় নতুন কথা নেই। চিনা সেনা কী ভাবে গালওয়ান এবং প্যাংগং অঞ্চলে সুযোগ পেলেই ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে, কী ভাবে তাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান ভারতীয় সেনারা। “স্যরজি, একটু হাতাহাতি হলেই শ্বাস ফুরিয়ে যায়। মনে হয় চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।” দমের কষ্টের কথা বলেই চলেছেন ভদ্রলোক। সাংবাদিকের মনে পড়ছে মারশিমিক লা-য়ের কথা। প্যাংগংয়ের অদূরে ভারত-চিন সীমান্তের এই সুউচ্চ পাসে উঠতে হলে তখন সেনার ছাড়পত্র লাগত। শেষের দিকে বাইকও চড়তে পারত না খাড়া পাহাড়। সাইলেন্সার বক্স কার্যত খুলে দিতে হত অক্সিজেন ঢোকানোর জন্য। শেষ অংশটুকু কোনও মতে বাইক ঠেলে হাঁচরপাঁচর করে ওঠা। সিভিলিয়নের জন্য একটু বেশিই অ্যাডভেঞ্চার। সেনার শরীর চাবুকের মতো। মার্শিমিক লা-য় ওজন নিয়ে ওঠা নামার ট্রেনিং করেছেন। তবে ট্রেনিং ট্রেনিংই। সংঘর্ষ যখন হয়, তখন পরিস্থিতি একেবারে বদলে যায়।

চাং লা থেকে খারদুং লা যাওয়ার রাস্তা। ছবি: পিটিআই।

সেই বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতেই তো ১৫ জুন রাতে সংঘর্ষ শুরু হল?

ছাতি টেনে বসলেন মধ্য চল্লিশের জওয়ান। “বিশ জওয়ান শহিদ হো গ্যায়া। নট আ ম্যাটার অফ জোক স্যরজি।” এর পর জওয়ান যা বলবেন, তার সত্যতা যাচাই করা অসম্ভব। দায়ও সাংবাদিকের নয়। পর পর বাক্যগুলো সাজিয়ে দেওয়া কেবল— “৬ জুনের বৈঠকে স্থির হয়ে গিয়েছিল ওরা গালওয়ান থেকে সরে যাবে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। ওরা যায়নি। কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে।১৫ তারিখ রাতে আমাদের জওয়ানরা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টে পৌঁছে দেখা যায় ওরা টেন্ট বানিয়ে রেখেছে। আমরা টেন্ট ভেঙে দিই। প্রথম লড়াইয়ে আমরাই জিতেছি। কিন্তু পরে ওরা বেশি লোক নিয়ে আসে। আমাদের রিইনফোর্সমেন্ট আসতে সামান্য সময় লাগে। সেই সুযোগটাকেই ব্যবহার করে ওরা। আমাদের লোকসান হয়ে যায় অনেকটা। আমাদের জওয়ানদের তুলে নিয়ে যায় ওরা।” কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমেছে ভদ্রলোকের। দৃশ্যত উত্তেজিত। গলার শিরা টান হয়ে বেরিয়ে আছে ঝোলা বারান্দার লোহার সাপোর্ট পিলারের মতো। “এক মওকা চাহিয়ে স্যরজি, এক মওকা,”— সেনাসুলভ অ্যাগ্রেশন চোখেমুখে ঠিকরে বেরচ্ছে।

‘এক মওকা চাহিয়ে স্যরজি।’ ছবি: পিটিআই।

এ গল্পের কোনও রিজয়েন্ডার হয় না। বীরত্বের কাহিনি বরাবরই এ ভাবে খচিত হয়। সমতলে বসে তার যুক্তিশৃঙ্খল, কূটনীতি, রাজনৈতিক ব্যাখ্যা নির্ধারিত হয়। ভারত এবং চিন কেউ কখনও মেনে নেবে না, তারাই প্রথম আঘাত করেছিল। কিন্তু ফ্রন্ট লাইনে একটা প্রথম থাকে। কখনও কখনও সেই প্রথমগুলো ঘটমান বর্তমানের মতো। চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। ওই যে, “এক মওকা চাহিয়ে স্যরজি, এক মওকা।” এক একটা ঘটনা বড় হয়ে গেলে আমরাই বোধ হয় তাকে শৃঙ্খল থেকে আলাদা করে নিয়ে কাটাছেঁড়া করি।

সাংবাদিকের পক্ষে সাত দিন কোয়রান্টিনে থাকা যে অসম্ভব, প্রথম দিনেই তা বুঝিয়ে দেওয়া গিয়েছিল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে। বহু বছর আগে এক অগ্রজ সাংবাদিক সহকর্মীকে শিখিয়েছিলেন, কেউ চোখ তুললে পাল্টা তার চোখের মণির দিকে তাকাতে হয়। যার চোখ অপলক থাকবে, সেই জয়ী। রণক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। যুদ্ধে কিংবা সাংবাদিকতায় নীতি শব্দটা নেহাতই আপেক্ষিক। ওই জওয়ান যেমন তা বোঝেন, বোঝেন সাংবাদিকও। লেহ্ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে কম বাক্য বিনিময় হয়নি। এতটাই যে, আইবি হোটেলে ঢুকে মুচলেকায় সই করতে বলেছিল। বলা গিয়েছিল, রাস্তায় বোঝাপড়া হবে।

খারদুং লা। ছবি: আইস্টক।

নাকাবন্দিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ভাড়ার গাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল বহু দূর। “আর বাকি রাখলেন কী? উর্দিটাও খুলে নিন এ বার।” পাড়ার জলসায় পাহাড়ি সান্যালকে নকল করতে গিয়ে ঠিক এ ভাবেই বেসামাল পায়চারি করেন বোকা অভিনেতা। লেহ্ শহরের প্রান্তে নাকাবন্দির দায়িত্বে ছিলেন এই পুলিশ অফিসার। সাংবাদিকের গাড়ি যখন এ রাস্তা ছেড়েছিল, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আটকাননি তিনি। গালওয়ান ভ্যালির রাস্তায় পরবর্তী চেক পোস্ট সেনার। গোটা গাড়ি তল্লাশি হল। দায়িত্বে থাকা অফিসার অবাক। “এত দূর এলেন কী ভাবে?” বলা গেল, কী ভাবে তা বড় কথা নয়। সামনে এগনো যাবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। হাসি মুখে অফিসারের রসিক জবাব। এলএসি পার করে বেজিং যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তো? গাড়ি ঘোরান। মাঝে আর কোথাও দাঁড়াবেন না।

আরও পড়ুন: সাংবাদিক সেজে ঘুরছে চিনা স্পাই! কড়া নজরদারিতে রয়েছি আমরাও

বেচারা নাকা অফিসার। তাঁর দ্বারে পৌঁছনোর ঘণ্টাখানেক আগেই সেনার এসওএস পৌঁছে গিয়েছে এসপি দফতরে। তার পর যা হতে পারে, চোখের সামনে তার নমুনা প্রত্যক্ষ করছি। বার বার রোষ গিয়ে পড়ছে ড্রাইভারের উপর। এই চালকই বছর কয়েক আগে খারদুং লা-র রাস্তায় বরফের তলায় চাপা পড়েছিলেন ঘণ্টা ছয়েক। নাকার এই বাঘারু অফিসারই তাঁকে উদ্ধার করেছিলেন। ফলে ‘নমখহারাম’এর উপরেই চোটপাট চলছে সবচেয়ে বেশি। সঙ্গে দু’একটা রুলের গুঁতো।
আর সাংবাদিকের কী হবে? যাবতীয় পরিচয়পত্র জমা হল। পর দিন এসে উদ্ধার করতে হবে। একেবারে স্কুলের হেডমাস্টারের শাস্তি।
—স্যরজি এক বাত বোলো, সচ মে চাইনিজ স্পাই আয়া ক্যায়া?

এত কাণ্ডের পরে কার্ডহীন গোত্রহীন সাংবাদিকের এই অনাবিল প্রশ্নে ব্যাঘ্রাচার্যের মতো শেষ ফোঁসটা হাঁকালেন দৃশ্যত বিধ্বস্ত পুলিশ অফিসার।

চাং লা। ছবি: শাটারস্টক।

হোটেলে মটন। বিআরও ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছেন। এ-ও এক অন্য অভিজ্ঞতা। লেহ্-র মার্চেন্ট কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, করোনা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য এ বছর লাদাখে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা। হোটেলগুলো তা-ও খানিক ব্যবসা পাচ্ছে। সাংবাদিক, সেনা, বিআরও, ইন্ডিয়ান অয়েলের পেশাদাররা এসে থাকছেন। আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ইঞ্জিনিয়াররা। রাস্তার কাজ করতে। বেশ একটা পিকনিকের আবহ। বড়বাজারের চোখে লাদাখের হিসেব কষবেন না পাঠক। মনে রাখতে হবে লেহ্-র জনসংখ্যা মেরেকেট দেড় লক্ষ, লাদাখের লাখ চারেক। চার মাসের ব্যবসা। যার অন্যতম পর্যটন। লেহ্ পুলিশ, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পর্যটন বোঝে, রেসকিউ বোঝে। তাদের কাছে প্রশাসনের অর্থ হল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সাধারণ চোর পেটানোর সুযোগও তাদের নেই। যেখানে চুরিই নেই, সেখানে চোরের পিঠে রুলের দাগ পড়বে কী করে?

চুরি হলে জমি চলে যায়। তিব্বতের গিয়েছে। লাদাখেরও যাবে না তো? এ আশঙ্কা লাদাখের আজকের নয়। বহু দিনের। স্থানীয় রিপোর্টার নিসারের স্পষ্ট মনে আছে, বছর তিরিশেক আগে এই লেহ্-র বাজারেই চিনের জিনিস পোড়ানো হয়েছিল। ১০ হাজার, ১২ হাজার টাকার কার্পেট দোকানিরা নিজেরাই আগুন দিয়ে জ্বালিয়েছিলেন। কারণ তিব্বতে কোনও এক লামা গ্রামে অত্যাচার চালিয়েছিল চিনা সেনা। নিসারের এখনও মনে আছে বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে দলাই লামার বক্তৃতা। মনে আছে, জম্মু কাশ্মীর পুলিশে চাকরিরত বাবা একদিন উপোশ করেছিলেন। মা খেতে পারেননি আরও অনেক দিন। নিসারের বাবা মুসলিম, মা বৌদ্ধ।

রিগজিনের বাবা বৌদ্ধ, মা মুসলিম। ঠাকুরদাদা কাজ করতেন ইন্দো-টিবেটান বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্সে। শ্রীনগরের এক কর্তা বলছিলেন, এখনও চিন সীমান্তে আইটিবিপি-র জওয়ানরা দাঁড়ান। তার ঠিক পিছনের সারিতে সেনা জওয়ানরা। মূলত তিনটি বলয়ে পর পর সাজানো হয়েছে সেনা পরিখা। মহাভারতের মতো এখনও কি অক্ষৌহিণী হিসেবে সেনা সাজানো হয়? অর্ধ চক্রব্যূহ, গড়ুর ব্যূহ, শকট ব্যূহ— এ সব শব্দ শোনা যায় সেনাবাহিনীর অন্দরে? শ্রীনগরের ওই রসিক সেনা কর্তা হাসতে হাসতে উত্তর দেন, “ফাঁদে ফেলবেন না মশাই। অর্জুনের ছেলের পরিণতি মনে আছে আমার। এ প্রশ্নের উত্তর দেব আর আপনি সেনার সঙ্গে বিজেপি মিশিয়ে রসালো গল্প জমাবেন, সেই দুধে চোনা। লাদাখে আছেন, লাদাখে থাকুন।”


রিগজিন বলছিলেন, চক্রব্যূহ একটা তৈরি হচ্ছে। ভারতকে ঘিরে ফেলছে প্রতিবেশীরা। চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন কারাকোরাম হাইওয়ের মতোই মসৃণ। প্রবল শীতেও ইসলামাবাদের গরম সমুদ্র বন্দর চিনের জন্য খোলা। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টিতে দু’বারের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডও এখন কোণঠাসা। অধুনা প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি দলের ঊর্ধ্বে উঠে এত যে বীরত্ব দেখাচ্ছেন, তার পিছনে বৃহত্তর কমিউনিস্ট স্বার্থ কাজ করছে না তো? নেপাল ভারতকে চ্যালেঞ্জ করছে, ইতিহাস কোনও দিন সে কথা ভেবেছিল? ভাগ্যিস মহাভারতে পরমাণু অস্ত্রের জটিলতা ছিল না। মহাভারতে সাউথ চায়না সি, অ্যামেরিকা, ইইউ এবং রাশিয়াও ব্রাত্য ছিল।

ছাদে বসে খারদুং লা-র মাথায় চাঁদের আলোয় বরফ পড়তে দেখলাম। ওই রাস্তায় খানিক এগোলে শিয়োক নদীর ধার ঘেঁষে রাস্তা ঘুরে যায় গালওয়ানের দিকে। সোজা রাস্তা পৌঁছয় সিয়াচেন বেস ক্যাম্পে। জটিলতা কি কেবল ভারতের সর্বোচ্চ এয়ার স্ট্রিপ দৌলত বেগ নিয়েই? নাকি আরও কিছু এয়ার স্ট্রিপ চিন এবং পাকিস্তানের নিশানায় আছে? খবরে শুনছি, এলএসি-র কাছে চিনের তিনটি এয়ারস্ট্রিপ নিয়েও ভারত আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক ঠুকে রেখেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement