কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো (বাঁ দিকে) এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিংহ নিজ্জরের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডার সম্পর্ক দিনে দিনে অবনতি ঘটছিল। নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় জমানায় কি সেই সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে? মোদীর সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত হতেই তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। রবিবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর মোদী ট্রুডোকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। একই সঙ্গে কানাডার সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্যও করেন মোদী।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সরকার গড়া নিশ্চিত হতেই মোদীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন ট্রুডো। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর (মোদী) সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত কানাডা। ট্রুডো আরও বলেছিলেন, ‘‘মানবধিকার, আইনের শাসন বজায় রেখেই দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’’
কানাডার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মোদীও চান। সোমবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর পোস্টে সে কথাই উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘‘ভারত পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং একে অপরের উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কানাডার সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।’’ কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের দিনে দিনে নানা ভাবে যে অবনতি হচ্ছিল, তার উন্নতি করতে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীই কার্যকরী পদক্ষেপ করবেন। ট্রুডোর শুভেচ্ছাবার্তা, তার পর কানাডার সঙ্গে মোদীর কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ দু’দেশের সম্পর্ককে মজবুত করবে।
উল্লেখ্য, গত বছর জুন মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে ভারতের গুপ্তচর সংস্থার ভূমিকা ছিল বলে জানিয়ে ট্রুডো কানাডার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতকে নিশানা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘আমাদের তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বিষয়ে আরও বিশদে তদন্ত করছে।”
পরবর্তী পদক্ষেপে কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। যার প্রতিক্রিয়ায় ট্রুডো সরকার ভারতে অবস্থানকারী কানাডার নাগরিকদের উদ্দেশে ‘বিশেষ নিরাপত্তামূলক সতর্কতা’ জারি করেছিল। এর পরে ট্রুডো নয়াদিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্কের পক্ষে সওয়াল করে সাময়িক ভাবে বিতর্কে ইতি টেনেছিলেন।
কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডার সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল নিউজ়’ সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা (সরকারি ভাষায়, ‘বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা’) ‘কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস’-এর একটি রিপোর্ট ফাঁস হয়েছিল। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়, কানাডার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ’ করতে পারে ভারত! যা নিয়ে নতুন করে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে। তবে ভারত ওই রিপোর্টের দাবি নস্যাৎ করেছিল। গত সাত মাস ধরে দু’দেশের মধ্য চাপানউতোর চলছে। মোদীর তৃতীয় জমানায় দু’দেশের সম্পর্ক উন্নতি হয় কি না, সেটাই দেখার।