রাশিয়ার উদ্যোগেই ভারত-চিনের এই বৈঠকটি হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই ভিডিয়ো আলোচনায় বসতে চলেছেন ভারত এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী। ২২ তারিখের ওই ভিডিয়ো বৈঠকে থাকবেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীও।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, রাশিয়ার উদ্যোগেই এই বৈঠকটি হচ্ছে। আপাতভাবে অতিমারি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই আসন্ন বৈঠকে একটি আস্থাবর্ধক বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের পক্ষ থেকে থাকবে— এমনটাই জানা গিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হচ্ছিল, তারা চায় ভারত-চিন উত্তেজনা কমুক। নয়াদিল্লিও বিষয়টি নিয়ে মস্কোর সঙ্গে কথা বলেছে। ফলে সরাসরি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা না নিলেও রাশিয়া যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিচ্ছে, তা বৈঠকের উদ্যোগটিতেই স্পষ্ট। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আমেরিকার দিকে ভারত যাতে না বেশি ঝুঁকে পড়ে, সেটা মস্কোর অগ্রাধিকার হবে।
চিনের সঙ্গে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে বলে আজ দাবি করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণে। লাদাখে চিনের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। সেনাবাহিনীর স্তরে তা মেটানোরও চেষ্টা চলছে। গত ৫ জুন কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে। তার পরে এই প্রথম মুখ খুলে সেনাপ্রধান বলেন, “নিরন্তর আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে আশাবাদী। সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
আরও পড়ুন: আচমকা স্বাদ চলে যাওয়া, গন্ধ না পাওয়াও করোনার লক্ষণ, জানাল কেন্দ্র
সেনাপ্রধান এ কথা বললেও আগের বৈঠকে চিনা বাহিনী লাদাখ নিয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়েছে বলেই সেনা সূত্রের খবর। মঙ্গলবার মেজর জেনারেল পর্যায়ে বৈঠক হয়। শুক্রবারই দুই সেনার মধ্যে স্থানীয় স্তরে বৈঠক হয়েছে। সেখানে চিন বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এখনই প্যাংগং লেকের উত্তর তিরে ফিঙ্গার-ফোর সংলগ্ন এলাকা থেকে সরতে নারাজ। পাহাড়ের যে অংশগুলি প্যাংগং লেকের মধ্যে ঢুকে রয়েছে, সেগুলিকেই ফিঙ্গার বলা হয়। ফিঙ্গার-ফোরের কাছে চিন অন্তত ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে রেখেছে বলে সেনা সূত্রের খবর। ৫ মে থেকে চিন ওই এলাকা দখল করে বসে থাকায় ফিঙ্গার-ফোর থেকে ফিঙ্গার-এইট পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর নজরদারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উল্টো দিকে চিনের সেনা সেখানে পাথরের বাঙ্কার এবং কাঁচা ঘর তৈরি করে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা সফুরার জামিন চেয়ে আবেদন মার্কিন আইনজীবী সংগঠনের
আজ মোদী সরকারকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল বলেন, “চিন আমাদের এলাকা দখল করে ফেলেছে। সে সময় মনে রাখা দরকার, কোন প্রধানমন্ত্রী কত বার চিন সফরে গিয়েছেন। নেহরু, রাজীব গাঁধী, নরসিংহ রাও, বাজপেয়ী এক বার করে চিন গিয়েছেন। মনমোহন সিংহ গিয়েছেন দু’বার। বাকি প্রধানমন্ত্রীরা কেউ চিনে যাননি। প্রধানমন্ত্রী মোদী পাঁচ-পাঁচ বার চিনে গিয়েছেন। চার বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও!”
সেনা সূত্রের খবর, চিন এতটাই অনড় মনোভাব দেখাতে চাইছে যে ভারতীয় সেনার সঙ্গে তারা বৈঠকও করছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে। সেই বৈঠকে চিন প্যাংগং লেকের বিষয়ে কথাই বলতে চায়নি। চিন মূলত পূর্ব লাদাখের গলওয়ান এলাকার বিবাদ মেটানো নিয়ে কথা বলছে। সেনা কর্তারা বলছেন, ফের কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকা নিয়ে কথা হতে পারে।