—ফাইল চিত্র
প্রায় মাস খানেক ধরা চলা সীমান্ত বিবাদ মেটাতে শনিবার শুরু হচ্ছে ভারত-চিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক। গত এক মাস ধরে চলা বিবাদের জেরে এই মুহূর্তে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে দু’পক্ষের প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি সেনা মোতায়েন রয়েছে। নিয়মিত ভাবে চক্কর মারছে বিমান। সীমান্ত উত্তেজনার পরিস্থিতিতে বৈঠকের ঠিক আগে সেনায় নতুন জেনারেল হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে শু ছিলিং-কে। তিনি সামরিক বাহিনীর কমান্ডার পদে ছিলেন। লাদাখ সীমান্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তিনি। কৌশলগত কারণেই ওই নিয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।
শনিবারের বৈঠকে ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন লে-তে থাকা ১৪ কোরের লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিংহ। বৈঠকটি হবে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার একেবারে গায়ে চুসুল সেক্টরের মালডো-তে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, কালকের বৈঠকটি দু’দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ডজন খানেক বৈঠক যার মধ্যে সেনার মেজর জেনারেল স্তরেও বৈঠকে ফল না হওয়ায় শেষে ভারত লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ে বৈঠকের ডাক দেয়। সম্মতি দেয় চিন।
কালকের এক আলোচনাতেই সমস্যা মিটে যাবে, এমন আশা অবশ্য করছে না সাউথ ব্লক। তবে উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে দর কষাকষির একটা জায়গা অন্তত তৈরি হবে। এই মুহূর্তে লাদাখ ছাড়াও উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচল সীমান্তে দু’পক্ষ পূর্ণ শক্তি নিয়ে মুখোমুখি। মে মাসের শুরুতে গলওয়ান উপত্যকা, প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্ত ও নাকু লা সীমান্তে চিন সৈন্য মোতায়েন শুরু করে। জবাবে ভারতও পাল্টা সেনা মোতায়েন শুরু করলে নাকু লা-তে চিন কয়েক কিলোমিটার পিছিয়ে যায়। এর পরে ভারতও ৮০০ মিটার পিছিয়ে এসেছে। প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, কালকের বৈঠকে প্যাংগং ও গালওয়ান উপত্যকায় স্থিতাবস্থার পক্ষে সওয়াল করা হবে। প্যাংগং লেক ও গোগরার উত্তরে ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত ঢুকে আসা চিনা সেনাদের প্রত্যাহারের প্রশ্নে বেজিং-এর উপর চাপ দেবে নয়াদিল্লি।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জে আবার প্রার্থী ভারত, নজর সন্ত্রাস ও কোভিডে
একই সঙ্গে লাদাখ সীমান্তে সড়ক নির্মাণের কাজ চালু রাখা হবে বলেও বেজিংকে জানাতে চলেছে নয়াদিল্লি। ওই সড়ক শেষ হলে লে থেকে সড়ক পথে সোজা দৌলত বেগ ওল্ডি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে ভারতীয় সেনা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত সেই কাজ আটকাতেই এ ভাবে সীমান্তে আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে চিন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট করে বলেন, প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এস পনাঙ্গের মতে ফিঙ্গার আট থেকে চার পর্যন্ত, অর্থাৎ সীমান্ত থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে উঁচু স্থানগুলিও কব্জা করেছে চিনা সৈন্য। সব মিলিয়ে ৩৫-৪০ বর্গ কিলোমিটার ভারতীয় জমি চিনের দখলে বলে দাবি প্রাক্তন সেনাকর্তার। যদিও ওই দাবি মানতে রাজি নয় দিল্লি। কূটনীতিকেরা মনে করছেন, ওই এলাকা দখল করে সড়কের কাজ বন্ধ করায় চাপ দিতে চাইছে বেজিং। যদিও নয়াদিল্লির ঘোষিত অবস্থান হল, নিজেদের এলাকায় আইন মেনে পরিকাঠামো গড়ে তোলার অধিকার ভারতের রয়েছে। তাই কাজ বন্ধ করার প্রশ্ন নেই।