হাসপাতালে গোপন খরচে ভারত আগুয়ান!

তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মতো রাজ্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। ২০১৮-’১৯ সালে তামিলনাড়ু স্বাস্থ্যে ১১,৬৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা মোট খরচের প্রায় ৩.৫%। কর্নাটক মোট বাজেটের ৪% বরাদ্দ করেছে স্বাস্থ্যে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০৪:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোথাও হাসপাতালে ভর্তির পরে ওষুধ থেকে জটিল অস্ত্রোপচার, চিকিৎসাসামগ্রী বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। আবার কোথাও দাবি করা হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে আর্থিক ভাবে দুর্বলদের দেদার সুবিধা দেওয়া হয়। বিমারও নানান ব্যবস্থা আছে।

Advertisement

বিভিন্ন রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে এই ধরনের হরেক পরিকল্পনার পরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, হাসপাতালে ‘গোপন’ খরচে প্রথম সারিতে ভারত! গোপন খরচ মানে চিকিৎসা বাবদ যে-খরচের সুস্পষ্ট হিসেব পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম ১০টি দেশের মধ্যেই রয়েছে ভারত। এ দেশের ঠাঁই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে এক সারিতে! সেন্ট্রাল ব্যুরো অব হেলথ ইন্টিলিজেন্সের রিপোর্ট, দেশের ৬২% স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচই ‘গোপন’ খরচ।

এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে মোট ‘গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট’ (জিডিপি)-এর মাত্র ১% স্বাস্থ্যে বরাদ্দ হয়েছে। যা মলদ্বীপ, ভুটান, নেপালের থেকেও কম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের স্থান ভারতের পরে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তাই বাড়ছে লুকোনো খরচ। সমস্যায় প়ড়ছেন রোগী ও পরিজনেরা। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৭-’১৮ সালে স্বাস্থ্য খাতে খরচের তুলনায় ২০১৮-’১৯ সালে বরাদ্দ ১% কমেছে। মোট বাজেটের মাত্র ২% স্বাস্থ্যে বরাদ্দ।

সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ জানান, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান কম। ফলে অধিকাংশ রোগী সেখানে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। বিভিন্ন সুবিধার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। জেলা বা মহকুমা হাসপাতালে সব ধরনের ওষুধ থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীদের ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিনতে হচ্ছে। সরকারি পরিষেবার বাইরে থাকছেন যাঁরা, তাঁরা চিকিৎসা খাতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে খরচের স্পষ্ট হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। বাজেটে বরাদ্দ না-বাড়ালে পরিকাঠামোগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। ফলে লুকোনো খরচ কমছে না। একই ছবি মহারাষ্ট্রে। গত বছরের তুলনায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে এ বছর সেখানে কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হয়েছে।

যে-কোনও উন্নত দেশের বাজেটে স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতে এখনও বিষয়টিকে অবহেলা করা হয়। নানা প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে একাধিক সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্য বিমার উপরে গুরুত্ব না-দিলে সমস্যা মিটবে না,’’ বলছেন চিকিৎসক কুণাল সরকার।

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ

• মলদ্বীপ ৯.৪%

• ভুটান ২.৫%

• শ্রীলঙ্কা ১.৬%

• ভারত ১%

• পশ্চিমবঙ্গ ২%

তথ্যসূত্র: সেন্ট্রাল ব্যুরো অব হেলথ

ইন্টেলিজেন্স এবং রাজ্য বাজেট

তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মতো রাজ্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। ২০১৮-’১৯ সালে তামিলনাড়ু স্বাস্থ্যে ১১,৬৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা মোট খরচের প্রায় ৩.৫%। কর্নাটক মোট বাজেটের ৪% বরাদ্দ করেছে স্বাস্থ্যে। যদিও পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্রের মতো অধিকাংশ রাজ্যে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করেছে বিশেষজ্ঞেরা। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্র নিয়ে কর্মরত কুমার রাণা বলেন, ‘‘কোথায় বরাদ্দ হচ্ছে, সেই প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেশি উপেক্ষিত। কমিউনিটি হেল্‌থ সেন্টারগুলো নড়বড়ে হওয়ায় প্রান্তিক বাসিন্দারা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে রাজনৈতিক অস্ত্র করেছে বিজেপি, তোপ কংগ্রেসের

ক্যানসার, যক্ষ্মার মতো রোগে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালাতে হয়। ডায়বিটিস, মানসিক অবসাদের মতো রোগও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞেরা জানান, তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement