প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা যদি সত্যি হয়, তা হলে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে ভারতই হবে চতুর্থ দেশ, যারা নিজের যানে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে।
মহাকাশে মানুষ গিয়েছে কবেই। সে তালিকায় রাকেশ শর্মা থেকে কল্পনা চাওলা, সুনীতা উইলিয়ামসের মতো ভারতীয় নামও আছে। কিন্তু সবটাই বিদেশি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের হাত ধরে।
এ বার দেশজ যানে মহাকাশ পাড়ি দেবে কোনও ভারত-সন্তান। আজ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তেমনটাই ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ‘‘২০২২ সালে, ভারত যখন ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে, যদি সম্ভব হয়, তা হলে তারও আগে, কোনও এক ভারতীয় মেয়ে কিংবা ছেলে জাতীয় পতাকা নিয়ে ‘গঙ্গাযান’-এ চেপে মহাকাশের পথে পাড়ি দিয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা যদি সত্যি হয়, তা হলে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে ভারতই হবে চতুর্থ দেশ, যারা নিজের যানে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে।
মোদীর ঘোষণার পরে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাকেশ শর্মা। রাকেশই একমাত্র ভারতীয় নাগরিক, যিনি মহাকাশ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে রুশ যান ‘সোয়ুজ টি-১১’-তে চেপে মহাকাশে যান তিনি।
আরও পড়ুন: ‘অচ্ছে দিন’-এর বাইশ কাহন এ বার ২০২২ পর্যন্ত ঠেলে দিলেন মোদী
ইসরোর পরিকল্পনা— একটি সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণ-যান মহাকাশে পাঠানো হবে। দুই থেকে তিন জন নভশ্চর নিয়ে যাবে যানটি। পৃথিবীর নীচের দিকে একটি কক্ষপথে (লো আর্থ অরবিট) প্রদক্ষিণ করবে সে। তার পর যাত্রীদের নিয়ে ফিরে আসবে।
উৎক্ষেপণ-পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইউপিএ সরকার ১৪৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করে দিয়েছিল। মোদীর ঘোষণার পরে ইসরোর আশা, আগামী দিনে সরকারের পক্ষ থেকে আরও অর্থসাহায্য পাবে তারা। সংস্থার অন্দরের খবর, গঙ্গাযান অভিযানের জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
ইতিমধ্যেই শ্রীহরিকোটায় যাত্রিবাহী ক্যাপসুল থেকে ‘ক্রু এসকেপ সিস্টেম’-এর পরীক্ষা করা হয়েছে। ৪ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের পরীক্ষা। ‘ক্রু এসকেপ সিস্টেম’ হল
একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা। উৎক্ষেপণের সময়ে লঞ্চ প্যাডে কোনও রকম সমস্যা হলে দ্রুত মহাকাশযাত্রী-সহ ক্রু মডিউলটি উৎক্ষেপণ যান থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনা হবে। ইসরোর ভিতরের খবর, এই পরীক্ষায় সফল হয়েছে সংস্থাটি। এমনকি, নকল যাত্রী বা ডামি পেলোড নিয়ে ক্রু-মডিউল উৎক্ষেপণ ও পরে তাকে আরব সাগরে ফিরিয়ে আনার পরীক্ষাও সফল হয়েছে। ২০১৯ সালে আরও দু’টি পরীক্ষা হবে। তার মধ্যে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ— কক্ষপথে মহাকাশযানকে পুনরায় প্রবেশ করানো (রি-এন্ট্রি টেস্ট)।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা। আমাদের স্বপ্ন এ রকম কিছু করে দেখানোর। কিন্তু এই মুহূর্তের সবটাই পরীক্ষা-স্তরে রয়েছে। কঠিন সব প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি আমরা। আরও অনেক কাজ বাকি।’’
তবে যে মোদী ঘোষণা করে দিলেন ২০২২ সালের কথা? শিবন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যে সময়সীমা দিয়েছেন, তার মধ্যে কাজ শেষ করা অসম্ভব নয়। এটা কোনও অবাস্তব ঘোষণাও নয়। অন্তত এক দশক আগে আমরা গবেষণা শুরু করেছিলাম। আর ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কঠিন ধাপ উতরে ফেলেছি।’’