পুষ্পরাজের বাড়িতে আয়কর হানা (বাঁ দিকে), পুষ্পরাজ জৈন (ডান দিকে) টুইটার থেকে নেওয়া।
পি জৈনকে নিয়ে আরও ঘোরালো রহস্য। এক ‘পি’, অর্থাৎ পীযূষ জৈনের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে আয়কর কর্তা মায় দেশবাসীর। নোট আর সোনা-দানার পাহাড় গুনতে গুনতে কালঘাম ছুটেছে তল্লাশকারীদের। যে কাণ্ড ঘিরে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি এমনিতেই তেতে ছিল। এই প্রেক্ষিতে সমাজবাদী পার্টির (সপা) প্রধান অখিলেশ যাদবের টিপ্পনি ছিল, ‘ভুল জায়গায় হাত পড়েছে! সমাজবাদী পার্টির তরফে বিধান পরিষদের সদস্য পুষ্পরাজ ওরফে পাম্পি জৈনের বদলে আয়কর তল্লাশি চালিয়েছে আর এক পি জৈন, পীযূষের বাড়িতে।’ মুলায়ম পুত্রের দাবি ছিল, পীযূষ আসলে বিজেপি ঘনিষ্ঠ। পদ্মের বরাভয়েই তাঁর এমন বাড়বাড়ন্ত। এ বার সমাজবাদী পার্টি ঘনিষ্ঠ পুষ্পরাজ জৈনের বাড়িতে তল্লাশি চালাল আয়কর বিভাগ।
সূত্রের খবর, সুগন্ধী, পেট্রোল পাম্প, হিমঘর-সহ একগুচ্ছ ব্যবসার মালিক পুষ্পরাজ জৈনের উত্তরপ্রদেশ ও মুম্বই মিলিয়ে প্রায় ৫০টি ঠিকানায় বর্ষশেষের সাত সকালে একযোগে তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর। দফতর সূত্রে দাবি, এ ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘সমাজবাদী সুগন্ধী’ বানিয়ে প্রথম নজরে আসেন অখিলেশ ঘনিষ্ঠ পুষ্পরাজ। অখিলেশের অভিযোগ ছিল, আয়কর দফতরকে বিজেপি এই পি জৈনের বা়ড়িতেই তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু নামের ফেরে অভিযান চলে অপর পি জৈন, পীযূষের বাড়িতে। পীযূষ বিজেপি ঘনিষ্ঠ, এমনই দাবি ছিল তাঁর। প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি অখিলেশের অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে।
পীযূষের বাড়িতে অভিযানের খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি অভিযোগ করে, পীযূষ জৈন-ই ‘সমাজবাদী সুগন্ধী’ তৈরি করে ভোটের আগে বাজার গরম করে তুলেছিলেন। এমন কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত এই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে প্রকাশ্য জনসভা থেকে বলেছিলেন, ‘‘বাক্স বাক্স টাকা বেরিয়ে আসছে। ২০১৭-এর আগে দুর্নীতির গন্ধে উত্তরপ্রদেশ ম-ম করত। কানপুরের লোকজন ব্যবসাপাতি ভালই বোঝেন।’’
তার পরই মুখ খোলেন অখিলেশ। বলেন, আয়কর ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে। দেখা যায়, পীযূষ নয়, ‘সমাজবাদী সুগন্ধী’ তৈরি করেছিলেন কানপুরেই আর এক পি জৈন, পুষ্পরাজ। ঘটনাচক্রে এই সুগন্ধী ব্যবসায়ী পুষ্পরাজ সমাজবাদী পার্টির টিকিটে উত্তরপ্রদেশ বিধান পরিষদের সদস্য।
পীযূষের কনৌজ ও কানপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১৯৬ কোটি টাকা নগদ ও ২৩ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত করে আয়কর দফতরের দল। ভুল জায়গায় তল্লাশি চালানোর অভিযোগকেও আমল দেয়নি তারা। উল্টে আয়কর দফতরের দাবি ছিল, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের হাতে আসা তথ্য যে নির্ভুল ছিল, বাজেয়াপ্ত হওয়া সামগ্রীই তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর শেষ হওয়ার আগেই এ বার তল্লাশি দল হানা দিল ‘সমাজবাদী সুগন্ধী’-এর জনক পুষ্পরাজ জৈনের বাড়িতে। সব মিলিয়ে ভোটের মুখে ‘সুগন্ধী রাজনীতি’র গন্ধে ভরপুর উত্তরপ্রদেশের আকাশ-বাতাস।