গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
দু’জনেরই বাংলাযোগ জোরালো। এক জন বাঙালি অভিনেত্রী। অন্য জন বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল। শুক্রবার সেই দু’জনের বাগ্যুদ্ধের ঠেলায় তুলকালাম রাজ্যসভায়। প্রথম জন বললেন, ‘‘যে সুরে আপনি কথা বলছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’ শুনে দ্বিতীয় জনের জবাব, ‘‘আমাকে আপনি শেখাতে আসবেন না। বসে পড়ুন।’’ প্রথম জন সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভা সাংসদ জয়া বচ্চন এবং দ্বিতীয় জন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। রাজ্যসভায় মাঝেমধ্যেই হাসিঠাট্টার ছলে কটাক্ষ বিনিময় হয় এই দু’জনের মধ্যে। কিন্তু শুক্রবার যা হল, তা ‘আদ্যোপান্ত ঝগড়া’। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, জয়ার প্রতি জগদীপের আচরণের প্রতিবাদে রাজ্যসভা ত্যাগ করেন সনিয়া গান্ধী। কংগ্রেসের বাকি সাংসদ এবং তৃণমূলের সাংসদেরাও ওয়াকআউট করে প্রতিবাদ জানান।
সপ্তাহখানেক আগেই রাজ্যসভার অধিবেশনে জয়া-ধনখড় দ্বৈরথ হয়েছিল। জয়া নিজের নামের সঙ্গে তাঁর স্বামী অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের নাম জুড়ে বলায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন ধনখড়। হাসির দমকে একসময়ে কাশতে শুরু করেন তিনি। হাসি থামাতে টেবিলে বার কয়েক চাপড় মারতেও দেখা যায় তাঁকে। পরে বক্তৃতা করতে উঠে জগদীপকে কটাক্ষ করে কথা বলেন জয়াও। কিন্তু সেই বাক্যালাপ হাসি-ঠাট্টাতেই থেমে গিয়েছিল। শুক্রবার কিন্তু তা হল না। বক্তৃতা করতে উঠে শুরুতেই ধনখড়ের সমালোচনা করেন জয়া। অমিতাভ-জায়া বলেন, ‘‘স্যর, আমি, জয়া অমিতাভ বচ্চন বলতে চাই, আমি একজন অভিনেতা। তাই শরীরী ভাষা এবং বিভিন্ন ভাবভঙ্গির মানে বুঝি। আমাকে ক্ষমা করবেন এটা বলার জন্য যে, আপনি যে সুরে কথা বলছেন, তা মেনে নিতে পারছি না। আমরা সহকর্মী। আপনি চেয়ারম্যানের আসনে বসতে পারেন, কিন্তু আমার মনে আছে আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন...’’। ঠিক এইখানে বাক্যটি অসমাপ্ত রেখেই থেমে যেতে হয় জয়াকে। কারণ তত ক্ষণে ধনখড় হাত তুলে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘জয়াজি আপনি বসে পড়ুন... বসে পড়ুন।’’
তত ক্ষণে সংসদে শাসকগোষ্ঠীর সাংসদেরা চিৎকার করতে শুরু করেছেন। ধনখড় হাত তুলে তাঁদের থামান। বলেন, ‘‘আমি জানি এই পরিস্থিতি সামলাতে হয় কী করে। আপনারা বসুন।’’ তার পরে জয়ার দিকে ফিরে ধনখড় বলেন, ‘‘জয়াজি আপনি অনেক সম্মান অর্জন করেছেন জানি। কিন্তু মনে রাখবেন অভিনেতারা কিন্তু পরিচালকের কথা শুনে চলেন। আমি এই চেয়ারে বসে যা দেখেছি, তা আপনি দেখেননি। ... আমাকে শেখানোর দরকার নেই। আমি এমন একজন মানুষ যে প্রথা ভেঙে বেরিয়ে... আর আপনি আমার সুর নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? যথেষ্ট হয়েছে। আপনি কথা বলতে পারবেন না।’’ ধনখড়ের এই বক্তব্যের জবাবে বিরোধী শিবিরের সাংসদেরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। কিন্তু ধনখড় তাঁর অবস্থানে অনড় থেকে বলেন, ‘‘আপনি যে কেউ হতে পারেন। আপনি একজন তারকা হতে পারেন। কিন্তু আপনাকেও নিয়ম মেনে চলতে হবে। আমি আর কোনও কথা শুনব না।’’
এই কথোপকথনের পরে জয়াকে সমর্থন করে রাজ্যসভার কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান সনিয়া। তিনি বলেন, ধনখড় তাঁদেরও রাজ্যসভায় আলোচনার সময়ে কথা বলতে দেননি। পরে সনিয়া এবং তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে বাকি বিরোধী সাংসদেরাও রাজ্যসভা ত্যাগ করেন। পরে জয়া বলেন, ‘‘উনি চেয়ারম্যানের আসনে বসতে পারেন। কিন্তু আমরা সকলে সাংসদ। আমরা স্কুলের বাচ্চা নই যে, উনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন। উনি বিরোধী সাংসদদের সঙ্গে যে ভাবে কথা বলছিলেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষ করে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে যখন কথা বলতে উঠলেন, তখন উনি মাইক বন্ধ করে দিলেন। এটা খুবই অপমানজনক। আমি তারই প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু উনি রাজ্যসভায় একজন মহিলাকে অপমান করেছেন। এখন রাজ্যসভায় যে ভাষায় কথা বলা হয়, তা আগে কখনও হত না।’’
রাজ্যসভায় বিতর্ক চলার পরে ধনখড় সংসদের ভিতরে এবং বাইরে বিরোধীদের আচরণের সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে শুক্রবারই বাজেট অধিবেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে ঘোষণা করেন। লোকসভাতেও স্পিকার ওম বিড়লা বাদল অধিবেশন শেষ বলে জানিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু পরে তা সোমবার পর্যন্ত চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে কোনও কারণ না দেখিয়েই শুক্রবার শেষ হল অধিবেশন।