মৃত নীলম সিংহ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
গ্রেটার নয়ডায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল আটমাসের গর্ভবতীর। শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার দিনভর একাধিক হাসপাতলের দরজায় ঘোরেন তাঁর পরিবোরের লোকজন। একটি-দু’টি নয়, তাঁকে ফিরিয়ে দেন আটটি হাসপাতাল। বেড ফাঁকা না থাকার কারণ দেখিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষমেশ অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শুক্রবার আচমকাই শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় নীলম সিংহ (৩০) নামের ওই মহিলার। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন তাঁর স্বামী বিজেন্দ্র সিংহ। ওই মহিলার ভাই শৈলেন্দ্রকুমার এবং অন্য এক আত্মীয়ও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
আদতে গাজিয়াবাদের খোডা কলোনির বাসিন্দা ওই দম্পতি। অটো রিকশায় চেপে গ্রেটার নয়ডার উদ্দেশে রওনা দেন। যে বেসরকারি হাসপাতালে নীলমের চিকিৎসা চলছিল, প্রথমে সেখানে পৌঁছন তাঁরা। কিন্তু ওই মহিলাকে ভর্তি নিতে রাজি হননি তাঁরা।
সেখান থেকে বেরিয়ে আশেপাশের আরও বেশ কয়েকটি নামীদামি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে যান তাঁরা। কিন্তু কেউই ওই মহিলাকে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। উপায় না দেখে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চলছে যে সারদা হাসপাতালে, সেখানে নীলমকে নিয়ে যান তাঁর স্বামী।
আরও পড়ুন: সীমান্ত-বিবাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ সমাধান চায় উভয়পক্ষই, লাদাখ নিয়ে বিবৃতি বিদেশমন্ত্রকের
কিন্তু কিছু ক্ষণ নীলমকে ভেন্টিলেটরে রাখার পর ওই হাসপাতালের তরফে নীলমকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। সেই মতো একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে ওই মহিলাকে নিয়ে ফের বেরিয়ে পড়েন তাঁর বাড়ির লোকজন। কিন্তু বেড খালি নেই বলে একাধিক হাসপাতাল তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। নামী সরকারি-বেসরকারি, সব জায়গা থেকেই তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয় বলে জানান ওই মহিলার ভাই।
এ ভাবে দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা হন্যে হয়ে ঘোরার পর গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (জিআইএমএস)-এ নীলমকে নিয়ে পৌঁছয় তাঁর পরিবার। তড়িঘড়ি সেখানকার ভেন্টিলেটরে নিয়ে যাওয়া হয়ে তাঁকে। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ। সেখানকার চিকিৎসকদের ধারণা, অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই নীলমের মৃত্যু হয়।
গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ নগরের জেলাশাসক সুহাস এলওয়াই। অতিরিক্ত জেলাশাসক মুণীন্দ্রনাথ উপাধ্যায় ও মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দীপক ওহরিকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিল মেটানোর ক্ষমতা নেই, হাসপাতালে হাত-পা বেঁধে রাখা হল রোগীর
তবে দেশ জুড়ে করোনা সঙ্কটের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার গ্রেটার নডায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা সামনে এল। গত ২৫ মে এ ভাবেই নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু কোনও হাসপাতালই ভর্তি না নেওয়ায়, শিশুটির মৃত্যু হয়। সে বার তদন্তে দুই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে।