CAA

নয়া নির্দেশে সিএএ নেই, দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের

গত কালের নির্দেশিকাকে অসৎ ভাবে, পিছনের দরজা দিয়ে সিএএ প্রয়োগ করার কৌশল বলেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিআই নেতা ডি রাজার মতে, এতে সরকারের ফাসিস্ত মুখ প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৫:৫১
Share:

—ফাইল চিত্র

দেশের ১৩টি জেলায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা হতেই বিতর্ক বাধল। বিরোধীদের বক্তব্য, এ হল নরেন্দ্র মোদী সরকারের অসৎ ভাবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রয়োগের কৌশল। কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তি, ২০১৯ সালে ওই আইন পাশ হলেও তার নিয়মকানুন এখনও তৈরি হয়নি। গত কালের নির্দেশিকায় ১৯৫৫ এবং ২০০৯ সালের আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০১১, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এ ভাবেই দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশে ভিসায় থাকা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছিল। এর মধ্যে নতুন কিছু নেই।

Advertisement

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই সংসদে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করায় মোদী সরকার। গত কালের নির্দেশিকাকে অসৎ ভাবে, পিছনের দরজা দিয়ে সিএএ প্রয়োগ করার কৌশল বলেছেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিআই নেতা ডি রাজার মতে, এতে সরকারের ফাসিস্ত মুখ প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। নাগরিকপঞ্জি বিরোধী যুক্ত মঞ্চ কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে ওই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, সরকার ওই নির্দেশ দিতে পারে না, কারণ ২০১৯ সালে পাশ হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের নিয়ম এখনও তৈরি হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, গত কালের নির্দেশিকার সঙ্গে ‘সাম্প্রতিক’ সিএএ-র কোনও সম্পর্ক নেই। খোদ অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দাবি করেছিলেন, কোভিড অতিমারি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের নিয়মকানুন তৈরি এবং সেই অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন পুরনো আইন মেনে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এটি অতীতেও হয়েছে। তখন সিএএ বিতর্ক না-থাকায় কেউ উচ্চবাচ্য করেনি।

গত কালের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যে অ-মুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন এবং যাঁরা এ দেশে স্থায়ী ভাবে থাকার আবেদন করে দীর্ঘ সময় ধরে ভিসা নিয়ে রয়েছেন, তাঁদের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৫ (রেজিস্ট্রেশন) ও ধারা ৬ (ন্যাচারালাইজেশন)-এর ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হতে চলেছে। গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের মোট ১৩টি জেলায় ওই তিন দেশ থেকে আসা ধর্মীয় শরণার্থীদের সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাশাসকেরা। গত কালের সিদ্ধান্তে অসম ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের কোনও জেলা না থাকায় একটি বিষয় স্পষ্ট— মূলত পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদেরই এ যাত্রায় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র।

Advertisement

২০১১ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকার পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু ও শিখ শরণার্থী, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ভিসায় বাস করছিলেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেন্দ্রের দাবি, ২০১১-১৪ সালের মধ্যে পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা ১৪,৭২৬ জন হিন্দুকে দীর্ঘকালীন ভিসা দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে তিন দেশের প্রায় দু’লক্ষ শরণার্থী ভারতে দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় রয়েছেন। এঁরা জমি-বাড়ি কেনার সুযোগ পেলেও ভোটাধিকার বা সরকারি চাকরি পান না। মোদী সরকারের যুক্তি, এঁদের আর পাঁচ জন ভারতবাসীর সমান সুবিধা দিতেই নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু পাঁচটি রাজ্যের ১৩টি জেলাতেই কেন এই কাজ শুরু হল, তার যুক্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই জেলাগুলিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন ক্রমশ বাড়ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে পদক্ষেপ করার আবেদন আসছিল। তার ভিত্তিতেই দীর্ঘদিনের বিদেশি শরণার্থীদের আবেদন খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক বা স্বরাষ্ট্রসচিবদের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আবেদন যথাযথ মনে হলে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement