মাকে জাগানোর চেষ্টা করছে শিশু। বিহারের মুজফ্ফরপুর স্টেশনে। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
দেড় বছরের শিশুটি শুধু এইটুকুই জানত, মা জেগে থাকলেই তার সঙ্গে কথা বলে। খেলে। মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে গেলে এই দেড় বছরের মধ্যে সে বারকয়েক মাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছে। আবার মায়ের গায়ের কাপড় সরালেই যে মা ধড়ফড় করে জেগে ওঠে, সেটাও দেখেছে শিশুটি।
কিন্তু এ বার আর মা ধড়ফড় করে জেগে উঠলেন না! শিশুটি বার বার মায়ের গায়ের কাপড় টানাটানির পরেও!
শিশুটি এও দেখেছে, গায়ের কাপড় সরিয়ে দিলে ঘুম ভেঙে জেগে উঠে মা কখনও কখনও খুব রেগে যায়। তাই কাপড় সরিয়ে নেওয়ার পরেও মায়ের সাড়া পাচ্ছে না দেখে শিশুটি আবার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় মাকে।
এত কিছুর পরেও যে শিশুটি বুঝতেই পারেনি, কোভিড-১৯ নামে একটা ভয়ঙ্কর ভাইরাস তার মাকে তার কাছ থেকে বরাবরের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে!
বিহারের মুজফ্ফরপুর স্টেশনের ঘটনা। সোমবারের। গোটা ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গুজরাত থেকে মহিলা তাঁর দেড় বছরের শিশুটিকে নিয়ে চড়েছিলেন শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে। আরও কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে। নিজের ঘরে ফিরবেন বলে। কিন্তু অসম্ভব গরম আর প্রচণ্ড খিদে, তেষ্টায় ট্রেনেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই মহিলা। ট্রেনটি মুজফ্ফরপুর স্টেশনে ঢোকার আগেই মারা যান তিনি। স্টেশনে নামিয়ে তাঁকে ঢেকে দেওয়া হয় কাপড়ে।
ওই মুজফ্ফরপুর স্টেশনেই পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে দু’বছরের একটি শিশুর দেহ। শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে তার মা, বাবা ঘরে ফেরার জন্য দিল্লি থেকে ওঠেন শ্রমিক স্পেশালে। কিন্তু অসহ্য গরম আর জল ও খাবারের অভাবে ট্রেনেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের টুইটকেও এ বার ‘যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর’ মনে করল টুইটার
আরও পড়ুন- চড়া সুর চিনের, লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রস্তুত ভারতও
ভারতে করোনা সংক্রমণ রুখতে গত ২৫ মার্চ থেকে টানা চতুর্থ দফায় লকডাউন চলছে। এই লকডাউনের জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে বা অন্য প্রয়োজনে গিয়ে আটকে পড়া মানুষজন। যদিও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যে ফেরাতে গত ১ মে থেকে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ নামে বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে ভারতীয় রেল। তবু নানা সমস্যায় এখনও ঘর থেকে দূরে অন্য রাজ্যে চরম দুরাবস্থার মধ্যে কাটাচ্ছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক।
এর আগেও দেখা গেছে, লকডাউনের মধ্যেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ফিরতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। বহু শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। ঘরে ফেরার টানে অসংখ্য শ্রমিককে দেখা গিয়েছে তল্পিতল্পা নিয়ে রাজপথ ধরেই হাঁটা শুরু করেছেন গন্তব্যের দিকে। দীর্ঘ পথ পেরতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে পথের মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন অনেক অসহায় শ্রমিক।
মুজফ্ফরপুর স্টেশনে এক মা আর একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সেই তালিকায় আরও দু’টি সংযোজন।