—ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবারই দেশের সর্বোচ্চ আদালত ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’-এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনটিকে ‘ঔপনিবেশিক’ বলে মন্তব্য করেছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কেন এমন দমনমূলক একটি আইনের অস্তিত্ব থাকবে, সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। আর এ দিনই হরিয়ানার সিরসায় বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার এবং বিজেপির এক নেতার বিরুদ্ধে দিন পাঁচেক আগে বিক্ষোভ দেখানো ১০০ জন কৃষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা করা হয়েছে। কৃষকদের ছোড়া ইটে ডেপুটি স্পিকারের গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছিল। ১১ তারিখের ঘটনায় সে দিনই পুলিশ নেতাদের খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনে কৃষকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল। হরিয়ানার বিজেপি সরকার এ দিন তার সঙ্গে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ আইন’-এও মামলা করল।
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের আনা তিন বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরেই দেশজোড়া বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন কৃষকরা। তাঁদের অভিযোগ, নতুন আইনে কৃষি ক্ষেত্রকে মোদীর দুই ‘বন্ধু শিল্পপতি’ রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী এবং আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানির জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা রাজধানী দিল্লি ঘেরাও করে একটানা বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন। যা আজ অনেক দিনই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদী সরকারের কাছে।
এই অবস্থায় ১১ তারিখ সিরসায় হরচরণ সিংহ ও প্রহ্লাদ সিংহের নেতৃত্বে কৃষকদের বিক্ষোভ-মিছিলে ডেপুটি স্পিকার রণবীর গঙ্গোয়া গাড়ি নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়েন। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে রাজ্য বিজেপির আর এক নেতাও ছিলেন। ক্ষিপ্ত কৃষকদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন বিজেপির ওই নেতা ও গঙ্গোয়া। অভিযোগ, মিছিলের মধ্যে থেকে ছোড়া ইটে গঙ্গোয়ার গাড়ির পিছনের কাচটি ভেঙে যায়। পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করে বিজেপি নেতাদের সেখান থেকে বার করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশ গঙ্গোয়া ও তাঁর সঙ্গী বিজেপি নেতাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করাতেই যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুই কৃষক নেতা-সহ ১০০ জন কৃষকের বিরুদ্ধে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা দায়ের করায় নিন্দায় সরব হয়েছেন আন্দোলনকারী কৃষকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা। তারা এই অভিযোগকে ‘সাজানো, মিথ্যা এবং তিলকে-তাল-করা’ বলে অভিহিত করেছেন। হরচরণ সিংহ ও প্রহ্লাদ সিংহ-সহ বিক্ষোভকারী কৃষকদের শায়েস্তার জন্যই এই বিতর্কিত দমনমূলক আইনকে হরিয়ানার বিজেপি সরকার ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, সর্বোচ্চ আদালত যখন রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে, তখন তাকে অস্ত্র করেই ১০০ কৃষককে হেনস্থা করা হচ্ছে!