National News

জেলখানার মতো ২২ ফুট উঁচু পাঁচিল, বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প হচ্ছে অসমে

ক্যাম্পটি বানানো হচ্ছে গুয়াহাটি থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ার মাতিয়ায়। ২৫ বিঘা জমির উপর। ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৯
Share:

দেশের নির্মীয়মান বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প। অসমের গোয়ালপাড়ায়। ছবি- টুইটার থেকে সংগৃহীত।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশজোড়া বিক্ষোভ, হিংসার জেরে দিনসাতেক আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, কোনও ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ই নেই দেশে! অথচ অসমের গোয়ালপাড়ায় দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেখানে রাখা হবে অন্তত ৩ হাজার মানুষকে, যাঁরা নতুন আইন মোতাবেক আর ভারতের নাগরিকত্ব দাবি করতে পারবেন না। অসম সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্পটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে মার্চেই।

Advertisement

ক্যাম্পটি বানানো হচ্ছে গুয়াহাটি থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ার মাতিয়ায়। ২৫ বিঘা জমির উপর। ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে। গোটা ক্যাম্প ঘিরে তোলা হচ্ছে ২০ থেকে ২২ ফুট উঁচু দেওয়াল। যেন জেলখানা!

নির্মাণের দায়িত্বে থাকা সাইট সুপারভাইজার মুকেশ বসুমাতারি বললেন, ‘‘এ মাসের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তেমনই বলা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষায় কাজ বন্ধ থাকায় দেরি হয়ে গেল। কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য কাঁচা মাল সময়মতো পৌঁছবে কি না, সেটা নিয়েই এখন আমি বেশি চিন্তিত।’’

Advertisement

গোয়ালপাড়ায় নির্মীয়মান সেই ডিটেনশন ক্যাম্প। ছবি- টুইটার থেকে সংগৃহীত

মুকেশের বাড়ি অসমের কার্বি আংলং জেলায়। সেখান থেকেই মাতিয়ায় এসে গোটা প্রকল্পের নির্মাণ-কাজের দেখভাল করছেন তিনি।

মুকেশ জানালেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে মোট ১৫টি বাড়ি বানানো হবে। প্রত্যেকটিই চার তলার। প্রত্যেকটি বাড়িতে থাকবেন ২০০ জন মানুষ। ক্যাম্পে থাকবে স্টাফ কোয়ার্টার, হাসপাতাল, স্কুল, অফিস কমপ্লেক্স, রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর ও নানা অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি হল।

ক্যাম্পে আলাদা জায়গায় বানানো হচ্ছে টয়লেট কমপ্লেক্স। তার ৬ট ব্লক বানানো হচ্ছে। প্রত্যেকটি ব্লকে থাকছে ১৫টি টয়লেট এবং ১৫টি বাথরুম।

সেই বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখতে সরকারি কর্তারা তো বটেই, আশপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর লোক আসছেন বলে ক্যাম্প এলাকায় গজিয়ে উঠেছে প্রচুর চায়ের দোকান। খাবারদাবারের দোকানও। অনেকেরই আশা, ক্যাম্প চালু হলে সেখানে কাজ জুটবে আশপাশের গ্রামবাসীদের। স্থানীয় বাসিন্দা বিপুল কলিতা বললেন, ‘‘চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজ নিশ্চয়ই জুটবে আশপাশের গ্রামের মানুষদের।’’

ডিটেনশন ক্যাম্প ঘিরে তোলা হচ্ছে ২০ থেকে ২২ ফুট উঁচু দেওয়াল। ছবি- টুইটার থেকে সংগৃহীত

অসমের বিভিন্ন জয়াগায় এমন আরও ১০টি ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ে তোলা হবে বলে অসম সরকারের একটি সূত্রের খবর। এ বছরই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি অনুযায়ী অসমের ১৯ লক্ষ মানুষ তাঁদের নাগরিকত্ব খুইয়েছেন। যা অসমের মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ। তাঁদের রাখা হবে এই সব ডিটেনশন ক্যাম্পে।

২০০৯ থেকে ২০১৫-র মধ্যে অসমে মোট ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্প বানানো হয়েছিল। গোয়ালপাড়া, কোকড়াঝাড়, যোরহাট, ডিব্রুগড়, তেজপুর ও শিলচরে। নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি যে সব ভোটার, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে ওই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে। তাঁদর নাম- ‘ডি-ভোটার’।

গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন ক্যাম্প। ছবি- টুইটার থেকে সংগৃহীত

কিন্তু সেখানে থাকা যে কতটা দুর্বিষহ, সেই কাহিনী শুনিয়েছেন মহম্মদ সানাউল্লা। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরির পর অবসর নেওয়া সানাউল্লা নাগরিকত্ব খুইয়েছেন গত মে মাসে।

সানাউল্লার কথায়, ‘‘ক্যাম্পগুলির একেকটা ঘরে ৪০/৪৫ জন করে রাখা হয়। রাতে মেঝেতে শুতে হয়, জায়গার অভাবে। বাথরুমও খুব নোংরা। যে খাবারদাবার পরিবেশন করা হয়, তা মুখে তোলার মতো নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement