অক্ষরজ্ঞান নেই তৃতীয় শ্রেণীতে, বই নেই ৩ মাস

শিক্ষায় আমূল সংস্কারের ডাক দেওয়া মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার মুখ পুড়ল পরপর দু’টি ঘটনায়। এক দিকে রাজ্য-জোড়া সমীক্ষা দেখাল, অসমের বিভিন্ন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই অক্ষরজ্ঞান হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৫
Share:

শিক্ষায় আমূল সংস্কারের ডাক দেওয়া মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার মুখ পুড়ল পরপর দু’টি ঘটনায়। এক দিকে রাজ্য-জোড়া সমীক্ষা দেখাল, অসমের বিভিন্ন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই অক্ষরজ্ঞান হয়নি। অন্য দিকে, সরকার বিনামূল্যে বই দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও সময় মতো বই সরবরাহ করতে না পারায় রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাবর্ষের প্রথম তিনটে মাস নষ্ট হতে বসেছে।

Advertisement

২০১৬ সালের ‘অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অফ এডুকেশন রিপোর্ট’-অনুযায়ী রাজ্যের গ্রামাঞ্চলের ১০ শতাংশ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা অক্ষর বা সংখ্যা চিনতে পারে না। ২০১২ সালে সেই হার ছিল ১৩ শতাংশ। শুধু তাই নয়, সমীক্ষকরা জানান, ৭০.৯ শতাংশ স্কুলে নিয়মিত মিড-ডে মিল দেওয়া হয় না। ২১ শতাংশ স্কুলে এখনও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই।
৩.৬ শতাংশ স্কুলে নেই শৌচালয়। ১১.৭ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচালয় নেই। ২৩.৬ শতাংশ স্কুলে বিদ্যুৎ নেই। ৪০.৮ শতাংশ স্কুলে নেই গ্রন্থাগার।

অন্য দিকে, অসমীয় মাধ্যমের সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেবে বলে ঘোষণ করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাবে ও সমন্বয় না থাকায় শিক্ষাবর্ষের প্রথম মাস পার হতে চললেও সরকার মাত্র ১ কোটি ৮০ লক্ষ বই ছাপাতে পেরেছে। অথচ বই দরকার ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ। সর্বশিক্ষা অভিযানের তরফে এর জন্য নগাঁওয়ের হিন্দুস্তান পেপার মিলকে দায়ী করা হয়েছে। কারণ আগাম টাকা নিয়েও তারা কাগজ সরবরাহ করতে পারেনি। সে কারণে ইতিমধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছেন। হিন্দুস্তান পেপার মিল কাগজ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্য সরকারকে দ্রুত বিকল্প রাস্তা খুঁজতে হয়। ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে সাড়ে ১১ হাজার মেট্রিক টন কাগজ কেনা হয় গুজরাত ও পঞ্জাব থেকে। কাগজ নিয়ে প্রায় ৫০০টি ট্রাক অসমে আসছে। কিন্তু তাতে হাত থেকে অনেক সময় বেরিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, নবম ও দশম শ্রেণিতে এখনও ৮০ লক্ষ বই ছাপানো বাকি। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বই পায়নি। বড়ো ও বাংলা মাধ্যমের স্কুলের অবস্থা আরও শোচনীয়। দফতরের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কাগজ এলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ছাপা শুরু হবে বই। কিন্তু শিক্ষকদের মতে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির আগে
ছাত্রছাত্রীরা হাতে বই পাবে না। আবার যে সব স্কুলে ম্যাট্রিক পরীক্ষার আসন পড়ে সেগুলি ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকায় মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের আগে ছাত্রছাত্রীদের বই হাতে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ থেকে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে ছাত্র সংগঠন আসু। বিভিন্ন জেলা শিক্ষা দফতরের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ চলেছে। শিক্ষামন্ত্রীর কুশপুতুলও পোড়ায় তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement