ছবি: সংগৃহীত।
ভোটের মুখে বড় ধরনের অস্বস্তির মুখে পড়লেন মধ্যপ্রদেশের দিমনি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় তাঁর ছেলে দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ তোমর ওরফে রামু ভাইয়াকে কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেনে যুক্ত থাকতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই কালো টাকা ভোটের কাজে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশন, ইডি, সিবিআই ও আয়কর দফতরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস। তোমর পরিবারের দাবি, ভোটের আগে নরেন্দ্র সিংহ তোমরের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই পরিকল্পিত ভাবে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ার কথা মাথায় রেখে যে সাংসদদের এ যাত্রায় ওই রাজ্যে নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়েছে তাঁদের মধ্যে ধারে ও ভারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তোমর। দল জিতলে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তোমর ঘনিষ্ঠেরা। কিন্তু গত চব্বিশ ঘণ্টায় তোমর-পুত্র দেবেন্দ্রপ্রতাপের যে সব ভিডিয়ো সামনে এসেছে তাতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। ভোটের ঠিক আগে কালো টাকা লেনদেনে তোমরের পুত্র জড়িত থাকার ভিডিয়ো সামনে আসায় সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অবিলম্বে তোমরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দাবি করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তোমরের ভূমিকাও সন্দেহের ঘেরাটোপে চলে এসেছে। তাই আগামী দিনে বিজেপি নেতাদের কালো টাকা ও দুর্নীতির যোগসাজশ নিয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।
সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা)-তে দেখা গিয়েছে, এক জন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে এক খনি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তোমর-পুত্র দেবেন্দ্র একশো কোটি টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নেওয়া নিয়ে কথা বলছেন। অন্য এক ভিডিয়োতে পঞ্জাব-রাজস্থানের কোনও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩৯ কোটি টাকা নেওয়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় ভিডিয়োতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা পাঠানোর কথাও শোনা গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ২০১৪-’১৯ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ইস্পাত ও খনিমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র সিংহ তোমর। ফলে ওই টাকা লেনদেনের সঙ্গে নরেন্দ্র সিংহ তোমরের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমি কৃষিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই যে ওই ভিডিয়ো সত্য না ভুয়ো। যদি অভিযোগ ভুয়ো হয়, তা হলে অবিলম্বে আইনি পদক্ষেপ করুন তোমর। অভিযোগ সত্য হলে এখনই ইস্তফা দিন কৃষিমন্ত্রী।’’
ভোট মরসুমে কয়েকশো কোটি কালো টাকা কোথা থেকে এল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের উচিত ওই টাকার উৎস খুঁজে বার করা।’’ কংগ্রেস নেতা কমল নাথের মিডিয়া উপদেষ্টা পীযুষ ববেলে এক্স হ্যান্ডলে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘প্রিয় ইডি, সিবিআই আয়কর দফতর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তার সত্যতা পরীক্ষা করা হোক।’’
ভোটের ঠিক মুখে ভিডিয়ো সামনে আসাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে তোমর শিবির। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে এখনও নীরব থাকার কৌশল নিলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খন্ডনে মাঠে নেমেছেন দেবেন্দ্র তোমর। তাঁর বক্তব্য, তাঁকে ঘুঁটি করে আসলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলতে ওই ভুয়ো ভিডিও সামনে আনা হয়েছে। আজ মোরেনা জেলার সিভিল লাইন থানায় অভিযোগ দায়ের করে দেবেন্দ্র জানান, কারসাজি করে তাঁর মুখ ব্যবহার করা হয়েছে। যা রাজনৈতিক চক্রান্ত।