সরকারের জন্মদিনে ঘুরে-ফিরে ছবি তোলালেন প্রধানমন্ত্রী, আর সাংবাদিকদের যাবতীয় প্রশ্নবাণে জেরবার হলেন তাঁর সেনাপতি।
ধলা নদীর উপর দেশের সব থেকে লম্বা সেতুর উপর একা হাঁটছেন নরেন্দ্র মোদী। সকালে অসমে পৌঁছে ৩ বছরের উৎসব শুরু করলেন তিনি। একের পর এক ছবি উঠছে ক্যামেরায়। যাবতীয় বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে শোনালেন নতুন ভারতের স্বপ্নের কথা।
আর তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ দিল্লিতে তখন তিন বছরের খামতিগুলি নিয়ে জেরবার হয়ে ঘাম মুছছেন। তাতেও ক্যামেরার ঝলকানি। শাহ হেসে বললেন, ‘‘ঘাম মোছার ছবি তুলে লাভ নেই। আমরা এখন আর হারছি না, যে এই ছবি লাগবে!’’
তিন বছর আগে সন্ধ্যা ছ’টায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানদের সাক্ষী রেখে আজকের দিনেই শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘সুদিন’ আনার। আজ দিল্লি ছেড়ে অসমে তিন বছরের রিপোর্ট কার্ড দিতে গিয়ে ‘সুদিন’-এর কথা মুখে আনেননি তিনি। কর্মসংস্থান কমছে কেন, তার জবাব দেননি। কাশ্মীর অশান্ত কেন, বলেলনি। সেনা অভিযানের বড়াইও করেননি। বরং সুদূরমেয়াদী কিছু প্রকল্পের ‘কহানি’ শুনিয়ে মোদী ফের ঝুলি থেকে বার করলেন ২০২২-এর মধ্যে নতুন ভারত গড়ার কথা। যেন ২০১৯ সালের লোকসভা জেতা এখন সময়ের অপেক্ষা।
মোদী বললেন, “আমি দেশের মানুষকে বিশ্বাস করার রাস্তায় হেঁটেছি। নানা বিষয়ে বিক্ষোভ তৈরির চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু দেশবাসী প্রতি পদক্ষেপে প্রধান সেবকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনতাই এই সরকার চালায়। আর তাদের অংশীদারিত্বেই নতুন ভারত হবে ২০২২ সালে।’’
মোদীকে যে প্রশ্ন করা যায়নি, অমিত শাহকে সামনে পেয়ে আজ সেগুলিই করা হল। আর ঘাম ছুটিয়ে মোদীর ঢাল হয়ে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টাও করলেন সেনাপতি। প্রশ্ন ছিল, যে ভাবে ইন্দিরা গাঁধীর সরকার বিরোধীদের পিছনে গোয়েন্দা সংস্থাকে লাগাত, মোদী সরকারও কি তা করছে না? চাকরির এই হাল কেন? সুদিনই বা আসবে কবে? অমিতের জবাব— ইন্দিরার সময়ে সাংবাদিকরা নির্ভয়ে প্রশ্ন করার সুযোগও পেতেন না। জরুরি অবস্থা মনে নেই? আর ১২৫ কোটি মানুষকে তো রোজগার দেওয়া যায় না। তবুও মুদ্রা যোজনায় ৮ কোটি লোকের রোজগার হয়েছে। আর সুদিন খোঁজার দায়িত্ব উল্টে চাপালেন সাংবাদিকের ওপরই। বললেন, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়ে যে বোন বিউটি পার্লার খুলেছেন, যে মায়ের ঘরে রান্নার গ্যাস এসেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন— সুদিন এল কি না।
যা শুনে বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, কথা তো ছিল ১২৫ কোটি মানুষেরই সুদিন আসার। না এলে কীসের উৎসব করছেন মোদী? তাঁরা বলছেন, ৩ বছরেও সুদিনের হদিস মেলেনি বলেই কি মোদী সে’টি খুঁজে আনার মেয়াদ আরও তিনটি বছর বাড়িয়ে নিলেন?