ভাবী ও সদ্য-প্রাক্তন: কুমারস্বামী ও ইয়েদুরাপ্পা। ছবি: পিটিআই
শেষরক্ষা হল না। পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় কর্নাটক বিধানসভায় আস্থা ভোটের লড়াই থেকে নাটকীয় ভাবে সরে দাঁড়ালেন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। দক্ষিণের রাজ্যটিতে ঘোড়া কেনা-বেচা করে সরকার গড়তে নেমে মুখ পুড়ল বিজেপির। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের কাছে অধরাই থেকে গেল কর্নাটক। অথচ, কাল পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসী বিজেপি মনে করছিল, শেষ পর্যন্ত জাদু দেখাবেন ইয়েদুরাপ্পা। বিরোধী জোট ভেঙে ঠিক জোগাড় করে নেবেন কাঙ্ক্ষিত সংখ্যা।
তবে আজ সকাল পর্যন্ত বিরোধী শিবির ভাঙার সর্বাত্মক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত হালে পানি পেলেন না ইয়েদুরাপ্পা। কংগ্রেস কেন জেডি(এস) শিবিরেও দাঁত ফোটাতে ব্যর্থ হল বিজেপি। ভোটাভুটিতে হেরে গেলে দলের অস্বস্তি বাড়বে, ওই যুক্তিতে দুপুরেই দিল্লি থেকে নির্দেশ যায় ইয়েদুরাপ্পার কাছে— ‘এক্সিট গ্রেসফুলি’ (সম্মান বাঁচিয়ে ইস্তফা দাও)। আজ বিধানসভা শুরুর পরেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে রাজ্যপাল বজুভাই বালার কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন ইয়েদুরাপ্পা। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠল বিরোধী শিবির। শেষ খবর— বুধবার বেঙ্গালুরুতে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন কংগ্রেস-জেডি(এস) জোটের নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী। উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন কংগ্রেসের দলিত বিধায়ক জি পরমেশ্বর। ঠিক হয়েছে দু’দলের সমসংখ্যক মন্ত্রী থাকবে সরকারে।
প্রথমে ঠিক ছিল সোমবারই শপথ নেবেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সে দিন রাজীব গাঁধীর মৃত্যুদিন হওয়ায় কংগ্রেসের তরফে অন্য কোনও দিন শপথের প্রস্তাব দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, বুধবার সকালে হবে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি।
কর্নাটকে সরকার গড়তে গোয়া-মণিপুরের ধাঁচে খোলাখুলি বিধায়ক কেনাবেচায় নেমে পড়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত দু’দিনে একাধিক ভিডিয়ো টেপে শোনা গিয়েছে মন্ত্রিত্ব আর বিপুল টাকার প্রস্তাব। আয়কর দফতরের জুজু দেখিয়েও ভোট কেনার চেষ্টা হয়। মাঠে নেমেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ইয়েড্ডিও। আজ প্রকাশিত অডিয়ো টেপে এক বিরোধী বিধায়ককে মন্ত্রিত্বের টোপ দিতে শোনা গিয়েছে ইয়েদুরাপ্পাকে। ‘অপারেশন পদ্ম’-এ সরাসরি মদত দিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহেরা। ঘোড়া-কেনাবেচা যে চলছে, তা আশঙ্কা করে বিচারপতি এ কে সিক্রি পর্যন্ত বলেন, ‘‘কংগ্রেস-জেডি(এস)-এর পক্ষে ১১৭ জন। তা হলে বিজেপি কী ভাবে ১১১ জনের সমর্থনের দাবি করে?’’ ইয়েদুরাপ্পার স্বীকারোক্তি ছিল, ‘‘অন্য দলের বিধায়ক না-ভাঙালে গরিষ্ঠতা পাব কোথা থেকে?’’
সকালে সুপ্রিম কোর্টে প্রোটেম স্পিকার সংক্রান্ত শুনানিতে গোটা আস্থা ভোট টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। বেলা এগারোটায় ইয়েদুরাপ্পা যখন বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে আসেন, তখনই দিল্লির নেতৃত্ব বুঝে যান হার অনিবার্য। অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে গত দু’দিন নিখোঁজ থাকা বিরোধী বিধায়কেরাও ফিরতে থাকেন একে-একে। গত কাল পর্যন্ত জেতার বিষয়ে নিশ্চিত এক নেতার আক্ষেপ, ‘‘আর কিছুটা সময় পেলেই ফল অন্য হত। সুপ্রিম কোর্ট এক দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়াটাই কাল হল।’’
আপাতত মেঘ কাটলেও, কর্নাটকে কুর্সির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল। শাসক ও বিরোধী শিবিরের আসনের ব্যবধান খুবই অল্প। কংগ্রেসের ঘোর আশঙ্কা, আগামী দিনে জেডি(এস)কে ভেঙে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েই যাবে বিজেপি। অমিত শাহ আজই সেই আভাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘এক বছরও টিকবে না এই জোট!’’