সোমবার গুরুগ্রামের এক হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের মহড়া। ছবি: পিটিআই।
কোভিডের উপসর্গ থাকলেও, পরীক্ষা করাচ্ছেন না অনেক আক্রান্তই। ফলে নীরবে দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। আক্রান্তের সংখ্যার এই ঊর্ধ্বমুখী রেখচিত্র রুখতে তাই জ্বর, সর্দি-কাশিজনিত অসুস্থতা হলেই পরীক্ষার উপরে জোর দিচ্ছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। পাশাপাশি, হাসপাতালে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে তার মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামো কতটা প্রস্তুত, তা খতিয়ে দেখতে আজ দেশ জুড়ে মহড়া হয়েছে।
গত দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এর পিছনে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছে আইএমএ। সংগঠনের জাতীয় সভাপতি শরদকুমার আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘‘অতীতে করোনা মোকাবিলায় যে নিয়মগুলি মেনে চলেছিলাম, তা পালন করা আমরা ছেড়ে দিয়েছি।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, গত তিন বছরের অভিজ্ঞতায় মানুষের করোনাজনিত মৃত্যুভয় প্রায় চলে গিয়েছে। ফলে সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা গেলেও, তাঁরা তাতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। চিকিৎসকদের মতে, পরীক্ষা করলে দেখা যাবে এঁদের একটি বড় অংশই করোনা-আক্রান্ত। কিন্তু পরীক্ষা না করার ফলে নিজের অজান্তেই ওই আক্রান্তেরা বাইরে বার হচ্ছেন এবং অন্যদের সংক্রমিত করছেন। ওই শৃঙ্খল ভাঙার জন্য যাঁদের উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের হয় পরীক্ষা করা বা বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আইএমএ-র মতে, বিশেষ করে প্রতিষেধক যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের করোনা থেকে সুরক্ষিত বলে মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার টিকার কার্যকারিতা ছ’মাসের পর থেকে কমতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ, করোনা ভাইরাস এখনও রয়েছে। আইএমএ বলছে, ওই ভাইরাস প্রতিদিন চরিত্র বদল করে নতুন উপপ্রজাতির সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে ভারতে মোট আক্রান্তের অন্তত ৪০ শতাংশ সংক্রমণের পিছনে রয়েছে এক্সবিবি.১.১৬ উপপ্রজাতি। চিকিৎসকদের বক্তব্য, যাঁরা বয়স্ক, যাঁরা দীর্ঘ দিন কোনও গুরুতর রোগে ভুগছেন, যাঁরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁরা সংক্রমিত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের জনসমষ্টিকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর উপরে জোর দিয়েছে চিকিৎসকদের ওই সংগঠন।
করোনা মোকাবিলায় দেশের হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো কতটা প্রস্তুত তা খতিয়ে দেখতে আজ মহড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। রাজ্যগুলির সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ওই মহড়া হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়ার আজ হরিয়ানার ঝর্ঝরের এমসে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়। তিনি দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের মহড়া খতিয়ে দেখতে যান। যে জেলাগুলিতে বা বিশেষ বিশেষ এলাকায় (হটস্পট) সংক্রমণ বেশি, সেখানে বিশেষ ভাবে পরীক্ষা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।