কী বলছে ত্রিফলা মডেল? ছবি— পিটিআই।
করোনার চলতি স্ফিতীর হ্রাস কমতে কমতে সেই ফেব্রুয়ারি মাস। ওই সময় থেকে কমতে কমতে মার্চ-এপ্রিল নাগাদ সংক্রমণের তলানিতে ঠেকার সম্ভাবনা। তিনটি ভিন্ন পরিস্থিতিকে আগাম জরিপ করে এমনই সম্ভাবনার দাবি করছেন ‘ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)’ এবং ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সস্টিটিউট (আইএসআই)’-এর একদল গবেষক। এই কাজে তাঁদের সহায় একটি ‘ত্রিফলা মডেল’।
ওই ত্রিফলা মডেলের ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হয়েছে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের সংক্রমণের রেখচিত্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের সামগ্রিক সংক্রমণ চিত্রকে। দুই বিশ্বসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওমিক্রন রূপ সংক্রান্ত গবেষকদের মতে, ভারতে সংক্রমণ যখন শিখরে পৌঁছবে, তখন দৈনিক ৮ লক্ষের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।
ত্রিফলা মডেল কী?
ভারতে করোনা সংক্রমণের চলন আগাম আঁচ করতে আইআইএসসি এবং আইএসআই-এর একদল গবেষক তিনটি কল্পিত পরিস্থিতিকে ভিত্তি করেছেন।
প্রথমত, যদি জনসংখ্যার ১০০ শতাংশই সংক্রমিত হন। দ্বিতীয়ত, যদি জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ সংক্রমিত হন। এবং তৃতীয়ত, যদি ৩০ শতাংশ জনসংখ্যা সংক্রমণ-ক্ষম হন। এই তিন কল্পিত পরিস্থিতির গাণিতিক বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিফলা মডেল।
এই তিনটি ভিন্ন পরিস্থিতির বিচারে গবেষকরা দেখেছেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই সংক্রমণের রেখচিত্র সমান্তরাল রেখায় চলে আসবে। অর্থাৎ, ভাইরাস নতুন করে সংক্রমিত করার ক্ষমতা হারাবে। জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ সংক্রমণ-ক্ষম পরিস্থিতিতে দেশে সংক্রমণ কমে আসবে ফেব্রুয়ারিতে। ১০০ শতাংশ জনসংখ্যাই সংক্রমিত হতে পারেন, এমন পরিস্থিতিতে অবশ্য সংক্রমণের রেখচিত্রের সমান্তরাল অবস্থায় পৌঁছতে খানিক বিলম্ব হবে। তবে তা কোনও ভাবেই এপ্রিলের পর নয়।
ত্রিফলা মডেলের মূল প্রতিপাদ্য কী?
১। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ভারতে দৈনিক ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ১০০ শতাংশই করোনা সংক্রমিত হতে পারেন, এমনটা ধরে নেওয়া হয়েছে।
২। জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ করোনা সংক্রমিত হতে পারেন, এই পরিস্থিতিতে দৈনিক ৩ লক্ষের সামান্য বেশি মানুষের হাসপাতালের বেডের প্রয়োজন হতে পারে।
৩। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ভারতে ২০ হাজারের বেশি আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হতে পারে। অন্য পরিস্থিতিতে তা থাকবে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে।
৪। করোনার চলতি স্ফীতি হ্রাস পেতে শুরু করবে ফেব্রুয়ারি থেকে। ১ মার্চ থেকে সংক্রমণের উল্লম্ব রেখচিত্র সমান্তরাল আকারে ফিরে যেতে শুরু করবে। ২০২২-এর এপ্রিলে ভারতে চলতি করোনা স্ফীতির সমাপ্তি ঘটবে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে সময়ের এদিক-ওদিক হতে পারে। কারণ, সব জায়গায় একই সময় সংক্রমণ শিখরে পৌঁছয় না।
৫। রাজ্যওয়াড়ি হিসেব দেখলে ত্রিফলা মডেল বলছে, দিল্লি, যেখানে এখন দৈনিক ২০ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের সন্ধান মিলছে, সেখানে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ সংক্রমিত হওয়ার উপক্রম হলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াতে পারে ৪০ হাজার। আর ১০০ শতাংশ দিল্লিবাসীই সংক্রমিত হওয়ার পরিস্থিতিতে সংক্রমণ বেড়ে হতে পারে দৈনিক ৬০ হাজারের বেশি।
৬। পুদুচেরি, পঞ্জাব ও লক্ষদ্বীপ— এই তিন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সংক্রমণের শিখর ছুঁতে অপেক্ষাকৃত বিলম্ব হবে বলে জানাচ্ছে ত্রিফলা মডেল। অর্থাৎ, অন্যান্য রাজ্যে যখন সংক্রমণ ক্রমশ কমতির দিকে যাবে, তখন এই তিন জায়গায় করোনা স্ফীতি লক্ষ্য করা যেতে পারে।