বিরোধীদের তুড়ি মেরে পাশ আধার বিল

আধার সংখ্যার জন্য নেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকবে কি না, এক দিকে তা নিয়ে প্রশ্ন। অন্য দিকে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার নামে সরকার দেশের মানুষের উপরে নজরদারি চালাতে পারে, সেই সংশয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:০১
Share:

আধার সংখ্যার জন্য নেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য গোপন থাকবে কি না, এক দিকে তা নিয়ে প্রশ্ন। অন্য দিকে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার নামে সরকার দেশের মানুষের উপরে নজরদারি চালাতে পারে, সেই সংশয়।

Advertisement

এই দুই যুক্তিতে প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও অনড় রইল মোদী সরকার। সংসদে পাশ হয়ে গেল আধার বিল। যার ফলে সরকারি ভর্তুকি বা ভাতা পেতে হলে আধার কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে গেল।

চলতি অধিবেশনেই এই বিলটি পাশ করাতে অর্থ বিলের তকমা দিয়ে আধার বিল পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যাতে লোকসভার পর রাজ্যসভায় এই বিলটি হোঁচট না খায়। কারণ রাজ্যসভা কোনও অর্থ বিলে সংশোধন করতে বা আটকাতে পারে না। শুধুমাত্র লোকসভার জন্য সুপারিশ করতে পারে।

Advertisement

লোকসভায় বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ রাজ্যসভায় প্রথম থেকেই এই বিল নিয়ে আপত্তি ওঠে। কেন এই বিলকে অর্থ বিলের তকমা দেওয়া হবে, সেই প্রশ্ন ছিলই। পাশাপাশি বিলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, নজরদারি রোখার দিকটি তেমন নেই বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কেন আধার বাধ্যতামূলক করা হবে। কেন নাগরিকদের ইচ্ছার উপর বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হবে না। সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, সিপিএম ও অন্য বিরোধীরা একজোট হয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই বিলে চারটি সংশোধন আনেন। যাতে সেই সংশোধনগুলি লোকসভায় সুপারিশ হিসেবে আলোচনা হয়। কিন্তু তারপরেই লোকসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে যাবতীয় সুপারিশ খারিজ হয়ে যায়। পাশ হয়ে যায় আধার বিল।

আধার বিল নিয়ে আজ বারবার জেটলির সঙ্গে কখনও সীতারাম ইয়েচুরি, কখনও জয়রাম রমেশের বিবাদ বেঁধেছে। তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে। কংগ্রেসের জয়রাম প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আধার বাধ্যতামূলক করা হবে? তাঁর দাবি, বিলে সংশোধন করে বিষয়টি ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দেওয়া হোক। কারও আধার কার্ড নেই বলে তাঁকে ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। একই যুক্তি দিয়েছেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনও।

আধার বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আধারের জন্য দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি অভিযোগ তোলেন, জাতীয় নিরাপত্তার ধুয়ো তুলে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার জেএনইউ ও হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর কী ধরনের দমননীতি নিয়েছে, তা সকলে জানে। আধারের জন্য দেওয়া তথ্য বেসরকারি সংস্থাগুলি নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে লাগাতে পারে বলেও সংশয় রয়েছে। জেটলি বোঝানোর চেষ্টা করেন, কারও অনুমতির ভিত্তিতেই আধারের তথ্য অন্য কাউকে দেওয়া হবে।

এই আপত্তিগুলির ভিত্তিতেই আধার বিলে চারটি সংশোধনী আনেন বিরোধীরা। তা সত্ত্বেও অনড় মনোভাব নেয় সরকার। আজকেই সংসদে বিলটি পাশ করানোর জন্য বিজেপি সাংসদদের বেশি রাত পর্যন্ত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজ্যসভার সুপারিশ লোকসভায় এলে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম ফের সেগুলোর পক্ষে যুক্তি দেন। তৃণমূলের সুগত বসুও দাবি তোলেন, রাজ্যসভা থেকে আসা সুপারিশগুলো যেন সরকার সময় নিয়ে খতিয়ে দেখে। কিন্তু তাতেও কান না দিয়ে মোদী সরকার সংখ্যার জোরে রাজ্যসভার যাবতীয় সুপারিশ খারিজ করে দেয়। বিরোধীরা অবশ্য তার আগেই ওয়াক-আউট করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement